টেনিসের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসর উইম্বলডনে চলতি বছরে সামজিক মাধ্যমে খেলোয়াড়দের প্রতি বিদ্বেষমূলক বার্তার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং সিস্টেম ‘থ্রেট ম্যাট্রিক্স’-এর তথ্যে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এই চিত্র।
ডেটা অনুসারে, উইম্বলডনের চলতি টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত খেলোয়াড়দের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো ১,৯০২টি বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট সনাক্ত করেছে। যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫১১।
এসব পোস্ট বা মন্তব্যকে স্পষ্টভাবে গালিমন্দ, হুমকিমূলক বা বৈষম্যমূলক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, এবারের উইম্বলডনে সবচেয়ে বেশি অপব্যবহারের শিকার হওয়া তিনজন খেলোয়াড়ই পুরুষ। অথচ গত বছর এই তালিকার শীর্ষ তিনে ছিলেন দুইজন নারী।
সবচেয়ে ভীতিকর তথ্য হলো —এই অপব্যবহারের ৩৭ শতাংশ এসেছে ‘রেগে যাওয়া জুয়াড়িদের’ কাছ থেকে।
প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত হওয়া ২,২৮,০৬০টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পুরুষ এককে রানারআপ হওয়া স্প্যানিশ তারকা কার্লোস আলকারাজ বলেন, ‘মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। আমি শুধু ইতিবাচক বার্তাগুলোতে মনোযোগ দিতে চাই।’
অন্যদিকে নারীদের এককে রানারআপ আমান্ডা আনিসিমোভা ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘হারার পর আমি ফোন খুলতেই ভয় পাচ্ছিলাম।
জানি, অনেক নেতিবাচক মন্তব্য অপেক্ষা করছিল।’
সেমিফাইনালে হারা আমেরিকান তারকা টেলর ফ্রিটজ বলেন, ‘আমি বাজে ম্যাচ খেললে ফোনই খুলতে চাই না। যা দেখব, তাতে মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।’
‘থ্রেট ম্যাট্রিক্স’ এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার পাবলিক পোস্ট ও মন্তব্য স্ক্যান করে, এরপর বিশেষজ্ঞ টিম সেগুলো যাচাই করে রিপোর্ট করে। এবার উইম্বলডনের প্রতিটি একক, দ্বৈত, মিশ্র দ্বৈত, কোয়ালিফাইং ম্যাচের খেলোয়াড়, আম্পায়ার এবং অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট এই নজরদারির আওতায় ছিল।
এর মধ্যে ১৩২টি পোস্ট ‘মাঝারি’ বা ‘উচ্চ’ মাত্রার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার জন্য নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ টেনিস তারকা কেটি বোল্টার সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ ওপেন চলাকালে নিজের বিরুদ্ধে আসা ‘অসহনীয়’ অনলাইন গালিগালাজ ও মৃত্যুর হুমকির কথা জানিয়ে বিষয়টি আবার আলোচনায় আনেন।
অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘খেলোয়াড়দের অনলাইন নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় গালিগালাজ ও হুমকি দিচ্ছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে এটা নিশ্চিত করতে আমরা প্রযুক্তি ও আইনি সহায়তা নিচ্ছি।’
সূত্র : বিবিসি