দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতেও সমানভাবে জনপ্রিয় তিনি। কাজ করছেন দুই দেশেই। বর্তমানে ওপার বাংলায় মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে জয়ার ‘ডিয়ার মা’।
সিনেমাটি মুক্তির আগেই কলকাতায় জয়ার অভিনয় করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা তথা কলকাতা পৌরসভার বরো চেয়ারম্যান জুঁই বিশ্বাস।
সোশ্যাল মিডিয়ায় জয়া দাবি করেন, এপার বাংলার শিল্পী-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পদ্মাপারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জয়া আহসানের মতো অভিনেত্রীকে কেন কলকাতায় রেড কার্পেট বিছিয়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? বলিউড পাকিস্তানি শিল্পী-অভিনেত্রীদের নিষিদ্ধ করতে পারে, কিন্তু আমরা উদার?
সোশাল মিডিয়ায় সরাসরি এমনই বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলেছেন এ নারী রাজনীতিবিদ। জুঁই বিশ্বাস কোনো অভিনেত্রী বা শিল্পী না হলেও টলিউডের অত্যন্ত পরিচিত মুখ এবং কলকাতার শিল্পী-কলাকুশলীদের খুবই কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি একদিকে যেমন টলিউডের শিল্পী-কলাকুশলীদের নির্বাচিত সংগঠন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের স্ত্রী, অন্যদিকে টলিউড পৌরসভার বরো-১০-এর চেয়ারম্যান।
ভারতীয় শিল্পী-কলাকুশলীদের ‘বাংলাদেশে কাজ না করতে দেওয়া’ নিয়ে জুঁইয়ের মঙ্গলবারের পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। টলিউডের অনেকেই তাঁর এই পোস্ট শেয়ারও করেছেন। জুঁই লিখেছেন, ‘দেশের আর পাঁচ জন নাগরিক এর মতই এই মতামত আমার একান্তই ব্যক্তিগত। কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি এটা বলছি না।
’
গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই বাংলার শিল্পীদের মাঝেও পড়েছে এর প্রভাব। এরই মধ্যে জয়া আহসানকে নিয়ে তৈরি নতুন সিনেমা ‘ডিয়ার মা’ আগামী ১৮ জুলাই কলকাতায় মুক্তির অপেক্ষায়। বস্তুত এমনই প্রেক্ষাপটে এদিন জুঁই সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন। জুঁইয়ের দাবি, ‘আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কী জেগে ঘুমিয়ে আছি? আমাদের শিল্পী, কলাকুশলী, ইভেন্ট অর্গানাইজাররা বাংলাদেশে কাজ করতে পারছেন না, আটক করে রাখা হচ্ছে, অথচ জয়া আহসানকে ভারতে রেড কার্পেট দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের কোনও শিল্পীর কি প্রতিভা নেই, জয়া যে চরিত্রটি করেছেন সেখানে অভিনয় করার মতো? কেন ভারতীয় যাদুঘরে তাঁর মিউজিক অ্যালবাম রিলিজ হয়?’
নিজের পোস্টে রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলে দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এই জনপ্রতিনিধি লিখেছেন, ‘মোদিজী ইউনুসের পাঠানো আম উপহার নেন, অথচ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের দুর্দশার কথা কেন বলছেন না? দেশে, বিদেশে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আর কত মার খাবে?’ পোস্টে পেহেলগাম থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেক ব্যানার্জির বক্তব্য তুলে ধরে জুঁই বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দশজন এখানে অভিনয় করলে অন্তত ভারতীয় পাঁচজনের ওপার বাংলায় সুযোগ দেওয়া হোক।’
তবে জুঁইয়ের এ ধরনের দাবি ভিত্তিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে। তার পোস্টেও দেখা গেছে প্রতিবাদী মন্তব্য। একজন ইধিকা পালের প্রসঙ্গ তুলে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতীয় আর্টিস্টরা বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ পাচ্ছেন না এটা কে বললো আপনাকে? কোনো টিউটোরিয়াল না করেই কি, কারো প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে পোস্ট করলেন? পশ্চিমবঙ্গের ইধিকা পাল বাংলাদেশের মেগাস্টার সাকিব খানের সাথে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন সিনেমায়। এছাড়াও কৌশানী মুখার্জী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানের মতো শিল্পীরাও প্রতিবছর বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন। জয়া আহসানের মতো কালজয়ী একজন অভিনেত্রীকে টার্গেট/ট্রিগার করে ভিত্তিহীন একটা কথা না বললেও পারতেন।’ কেউ লিখেছেন, ‘আপনি জাস্ট জানেন না, বাংলাদেশে কেউ কাজ করছে কি করছে না, না জেনে বা আংশিক জেনে মন্তব্য করবেন না’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পীদের কাজ করা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এমনকী গত বছর শাকিব খানের ‘বরবাদ’ সিনেমায় কলকাতার শ্যাম ভট্রাচার্য ‘জিল্লু’ চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন। কলকাতার নায়িকা ইধিকা পালও কাজ করেছেন বরবাদে। এছাড়া কলকাতার কলাকুশলীরাও কাজ করছেন ঢাকাইয়া সিনেমায়। শাকিব খানের ‘দরদ’ সিনেমাতেও নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে মুম্বাইয়ের সোনাল চৌহানকে। যা গত বছর মুক্তি পায়। তাই জুঁই বিশ্বাসের এ ধরনের দাবিকে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন দুই বাংলার অনেক দর্শক ও নেটিজেনরা।
এসএন