এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলিতে চারজনের প্রাণহানির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেছেন, “গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন। একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন না, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ কমিটি দু-এক দিনের মধ্যে করতে চাচ্ছি।”
“আশা করি সাংবাদিকরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কমিশনকে সহায়তা করবেন। আপনাদের ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয় তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা জানতে পারব, ঘটনার দিন কী হয়েছিল? কেন হয়েছিল?”
উপদেষ্টা আরও বলেন, “ঘটনা প্রবাহ জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছি। আমরা ঘটনার তদন্ত করতে আসিনি। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সরকার গভীরে যাবে।”
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “এমন একটা পরিস্থিতি হবে, এটি স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর ব্যাপকতা যে এত হবে, তা কেউ অনুমান করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সীমিত সম্পদ ও লোকবল দিয়ে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সবাই অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছে। সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জও আমাদের কাছে যা, আমাদের নিজেদের জেলাও তাই। প্রধান উপদেষ্টা সেই বর্তাটাই দিয়েছেন। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করি, যারা অন্যায় করেছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেছে, অবশ্যই আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হবে।”
গোপালগঞ্জে গণগ্রেপ্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হবে না্। পুলিশ বা কোনো দপ্তর থেকে মামলা দিলেই সেটা চূড়ান্ত নয়। এটা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। আমরা চেষ্টা করব, যাতে কোন নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।”
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত দীপ্ত সাহার মরদেহ দাহ করা হয়। তার ময়নাতদন্তের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রযুক্তির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসব আধুনিক প্রযুক্তি থাকতে পারে। সেগুলো ব্যবহার করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পাবে।”
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। তারা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
এরপর দুই উপদেষ্টা গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কের এনসিপির সভা মঞ্চ, সংঘর্ষের স্থান, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা কারগারের জেলার তানিয়া জামান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
হামলা–সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পুনরায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাত ৮টায় দুজনকে গোপালগঞ্জ গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে এবং অপর একজনকে টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান এ তথ্য জানান।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে আদালতের নির্দেশে তিনজনের লাশ কবর থেকে তুলে হাসপাতালে আনা হয়।
“তিনজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে জানানো হবে। এর বাইরে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, এখানে কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।”
এসএন