দীর্ঘ ১৫ মাসের অপেক্ষার পর অবশেষে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে এলো ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ নামে পরিচিত অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। মঙ্গলবার তিনটি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার নিয়ে উত্তরপ্রদেশের হিন্ডনে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণ করেছে মার্কিন পরিবহণ বিমান।
হিন্ডন বিমান ঘাঁটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জোড়া দেওয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এই হেলিকপ্টারগুলো রাজস্থানের জোধপুর সেনা ঘাঁটিতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আধুনিক এবং দুর্ধর্ষ সামরিক হেলিকপ্টার হলো অ্যাপাচে। ১৯৭৫ সালে মার্কিন হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রথম এই হেলিকপ্টার তৈরি করে।
তারপর ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই হেলিকপ্টার প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সমরাস্ত্র ও সামরিক যানবাহন প্রস্তুতকারী কোম্পানি ম্যাকডোনেল ডগলাস। ১৯৯৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি উৎপাদন করছে মার্কিন বিমান নির্মাণকারী জায়ান্ট বোয়িং।
প্রতিপক্ষের ট্যাঙ্ক ধ্বংসে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রয়োজনে এক মিনিটে ২৮ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে অ্যাপাচে ৩০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম এই কপ্টার।
নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে এই হেলিকপ্টারের রয়েছে টিএডিএস প্রযুক্তি ও নাইট ভিশন সেন্সর। এর মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে ও খারাপ আবহাওয়াতেও শত্রু পক্ষের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম অ্যাপাচে। ড্রোন নিয়ন্ত্রণ ও ডেটা লিঙ্ক করার ক্ষমতা এই কপ্টারকে আরও বেশি অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন করে তুলেছে।
বর্তমানে ভারতসহ বিশ্বের ১৭টি দেশ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। ট্যাংক ধ্বসে পারঙ্গমতার জন্য এ হেলিকপ্টারের অপর নাম ‘ট্যাঙ্ক কিলার’ এবং প্রায় অভেদ্য বর্মের জন্য এটি ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ নামেও পরিচিত অ্যাপাচে।
মঙ্গলবার ভারতে যে তিনটি হেলিকপ্টার এসেছে— সবগুলেই অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই প্রজন্মের। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রে জনা গেছে, এই প্রজন্মের অ্যাপাচেগুলো একসঙ্গে ১২৮টি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে পারে। যুগপৎ আঘাত হানতে পারে ১২টি লক্ষ্যে। মার্কিন হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেটের পাশাপাশি অ্যাপাচেতে রয়েছে ৩০ এমএম অটোক্যানন, যা থেকে দু’মিনিটে ১,২০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া সম্ভব।
২০২০ সালে ৬টি অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই হেলিকপ্টার কেনার জন্য বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রতিটি হেলিকপ্টারের মূল্য ধরা হয় ১০ কোটি ডলার।
২০২৪ সালের জুন মাসে এই ছয়টি হেলিকপ্টারের ভারতে আসার কথা ছিল; কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সেই চালান আসেনি। পরে বোয়িং জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনটি এবং ২০২৫ সালের জুন মাসে বাকি তিনটি অ্যাপাচে পাঠানো হবে। সেই ডেটলাইন পূরণেও ব্যর্থ হয় বোয়িং।
শেষে চলতি মাসে এক ফোনালাপে ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের গোচরে আনেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাদের সেই ফোনালাপের পর গতকাল ভারতে এসে নামল অ্যাপাচের প্রথম চালান।
২০১০ সালে প্রথম অ্যাপাচে হেলিকপ্টার কিনতে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার। নতুন চালান আসার আগে মোট ২২টি অ্যাপাচে ৬৪ হেলিকপ্টার ছিল ভারতের। এসব অ্যাপাচের সবগুলোই বিমান বাহিনী ব্যবহার করছে।
নতুন যে অ্যাপাচেগুলো এসেছে— সেগুলো ব্যবহার করবে ভারতের স্থলবাহিনী।
এফপি/ টিএ