একই রানওয়েতে সামরিক ও বেসামরিক ফ্লাইট, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি মাত্র রানওয়েতেই ওঠানামা করে সামরিক ও বেসামরিক বিমান। বিষয়টি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও, স্থানের অভাব ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই ব্যবস্থাই চালু রয়েছে বহু বছর ধরে।

এদিকে, বিমানবন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা জননিরাপত্তাকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা থেকে বিমানবন্দর স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত বহু আগেই নেওয়া উচিত ছিল। অন্তত সামরিক ফ্লাইট কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এখনই চিন্তা করা দরকার।

সোমবার (২১ জুলাই) উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

কালের পরিক্রমায় ঢাকার এই বিমানবন্দর এখন অভিজাত আবাসিক এলাকা ও শিল্পাঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর আশপাশে একের পর এক গজিয়ে উঠেছে উঁচু আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবতা মেনে নিয়েছে বটে, তবে নিরাপত্তার প্রশ্নে বিষয়টি অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কোনো যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’

অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এত ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মূল বেইসও পরিচালিত হচ্ছে, যা এক অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করছে। ২০ বছর আগেই বিমানবন্দর আরিয়াল বিল এলাকায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক চাপে তা বাস্তবায়ন হয়নি।’

বর্তমানে শাহজালালে একটি মাত্র রানওয়েতে উঠানামা করছে বেসামরিক ও সামরিক উভয় ধরনের ফ্লাইট। এরই পাশাপাশি উত্তর পাশ দিয়ে উড়ছে হেলিকপ্টার। সাবেক সেনা পাইলট কর্নেল মো. সোহেল রানা বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী সামরিক ও বেসামরিক বিমান একসঙ্গে একটি রানওয়ে ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে জায়গা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে বাধ্য হয়ে একই জায়গা থেকে উড্ডয়ন করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্থানান্তরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই তা সহজ নয়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্য বিমানবন্দরগুলো—বিশেষত চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, যা সমুদ্রের কাছাকাছি এবং অতটা ঘনবসতিপূর্ণ নয়—সামরিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিকল্প হতে পারে।

পাইলটরা জানান, শুধু নিরাপত্তা নয়, একই রানওয়ে ব্যবহারের কারণে ফ্লাইট শিডিউলও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। টেক-অফের জন্য ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের, যার ফলে বিমানেই ভোগান্তি বাড়ছে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সঙ্গীত মঞ্চে সেরা ১৬-তে রোমাইসা, রাতারাতি বদলে গেল জীবন Dec 01, 2025
img
টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় ইজতেমার আখেরি মোনাজাত মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর প্রতি দোয়ার আহ্বান জামায়াতের Dec 01, 2025
img
কুষ্টিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইনু Dec 01, 2025
img
হোয়াটসঅ্যাপ আনইনস্টল করার কারণ জানালেন ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের নায়িকা Dec 01, 2025
img
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের প্রথম সচিব হাবিবুর রহমান Dec 01, 2025
img
‘ধুরন্ধর’ নিয়ে আইনি জটিলতা, সেন্সরকে দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশ Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে সরকারের প্রজ্ঞাপন Dec 01, 2025
বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের ২ বছরের কারাদণ্ডে তোলপাড় ব্রিটিশ মিডিয়ায় | টাইমস ফ্ল্যাশ Dec 01, 2025
img
নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও ৭৭ উপজেলায় নতুন ইউএনও Dec 01, 2025
img
‘দেব-শুভশ্রী আলোচনা’ নিয়ে রুক্মিণীর মন্তব্য Dec 01, 2025
img
সমুদ্রের অতল গভীরে মিশে আছে ২০ মিলিয়ন টন সোনা, যার মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ কোটি ডলার Dec 01, 2025
img
জোড়া গোল করে ইতিহাস গড়লেন লাউতারো Dec 01, 2025
'৫ আগষ্টের পর এখনও আ. লীগ হুমকি দিচ্ছে' Dec 01, 2025
খালেদা জিয়াকে দেখে এসে যা বললেন মীর স্নিগ্ধ Dec 01, 2025
img
সুন্দরবনের গল্প নিয়ে পর্দায় আসছেন শ্বেতা Dec 01, 2025
img
নির্বাচিত সরকারের পক্ষে চলমান সংস্কার হজম করা কঠিন হতে পারে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা Dec 01, 2025
img
নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল: নির্বাচন কমিশনার Dec 01, 2025
img
‘সংস্কারের পাহারাদার’ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এনসিপি: নাহিদ Dec 01, 2025
img
বিবাহবার্ষিকীর দিনে ভক্তদের চমকে দিলেন অভিনেতা রণদীপ Dec 01, 2025