কাজের ভিসা, পারিবারিক পুনর্মিলন এবং ব্রাজিলের নাগরিকদের বসবাসের স্বয়ংক্রিয় অনুমতির মতো বিষয়গুলোতে নতুন করে বিধিনিষেধ যোগ করতে যাচ্ছে দেশ পর্তুগাল। আর এই বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে পার্লামেন্টে ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ ইউরোপের এ দেশটির আইনপ্রণেতারা।
অভিবাসীবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও সম্প্রতি পর্তুগালের সরকার ধারাবাহিকভাবে নিজেদের অভিবাসন নীতিকে কঠোর করে চলেছে। পার্লামেন্টের এই অনুমোদন তা আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে দেশটিতে বসবাসরত অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতেও বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছিল পর্তুগাল।
সংশোধিত বিধানগুলোতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কাজের ভিসা শুধু উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন অভিবাসীদের জন্যই ইস্যু করা হবে। পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার শর্তগুলো আরো কঠোর করা হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে নিজেদের সাবেক উপনিবেশ ব্রাজিল থেকে আসা যে কোনো নাগরিককে বসবাসের অনুমতি দিত পর্তুগাল ৷ নতুন নীতির বাস্তবায়ন শুরু হলে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন ব্রাজিলিয়ানরা৷
অনিয়মিত বা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নির্বাসন সহজ করতে এবং অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে পুলিশের একটি নতুন ইউনিট গঠনের পরিকল্পনাতেও সবুজ সংকেত পেয়েছে পর্তুগিজ সরকার।
সেইসঙ্গে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব অর্জনের প্রক্রিয়াকেও আরো কঠোর করতে চায় সরকার। পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা উত্থাপনও করা হয়েছে; কিন্তু দেশটির আইনপ্রণেতারা বলেছেন, এই পরিকল্পনা নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা প্রয়োজন। তাই সংসদীয় পর্যালোচনার জন্য সেই পদক্ষেপটি স্থগিত করা হয়েছে।
নতুন যেসব বিধিনিষেধ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর মতো অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপগুলো নিতে যাচ্ছে পর্তুগিজ সরকার। দেশটিতে আনুমানিক ১৮ হাজার বিদেশি নাগরিক রয়েছেন, যাদের বসবাসের অনুমতি নেই। সরকারের নতুন বিধিনিষেধ তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব অভিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং নেপালের নাগরিক।
অফিসিয়াল কাজের ভিসা নেই এমন অভিবাসীদের গত বছর থেকে পর্তুগালে আর ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনিয়মিতভাবে পর্তুগালে এসে কাজ জুটিয়ে নিয়মিত হওয়ার সুযোগটিও আর থাকছে না।
২০১৮ সালে প্রবর্তন করা একটি নীতিও বাতিল করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ওই নীতি অনুযায়ী পর্যটন ভিসায় পর্তুগালে আসা কোনো ব্যক্তি এক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে অবদান রাখার প্রমাণ দিয়ে বসবাসের অনুমতি নিতে পারতেন।
অভিবাসন ইস্যুতে সরকারের একের পর এক কঠোর নীতি গ্রহণের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশটিতে বসবাসরত অভিবাসীরা। তার প্রতিফলন দেখা গেছে গত বছরের অক্টোবরে। রাজধানী লিসবনে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অনেক অভিবাসী বিক্ষোভ করেছিলেন।
সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীরাও। পারিবারিক পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি পর্তুগিজ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশিরা।
ডানপন্থায় ঝুঁকছে সরকার-
পর্তুগিজ সরকারের একের পর এক কঠোর নিয়ম-নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ইঙ্গিত মিলছে। অথচ অভিবাসন ইস্যুতে উদার অবস্থানে থাকায় প্রতিবেশী স্পেন ও পর্তুগালকে একটা সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর কটু কথাও শুনতে হয়েছে।
গত বছরের মার্চে ক্ষমতা নেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনিগ্রো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অভিবাসন ইস্যুতে ‘প্রশস্ত-খোলা দরজা’ নীতি বন্ধ করবেন তিনি।
২০২৪ সালের শেষে পর্তুগালে বসবাসরত বিদেশিদের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার৷ সংখ্যাটি দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সাল থেকে অভিবাসীর সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে।
এমকে/এসএন