ইউরো জয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিলো ইংল্যান্ড। সোমবার (২৮ জুলাই) দেশে ফিরতেই টেন ডাউনিং স্ট্রিটে তাদের আমন্ত্রণ জানান উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার। সেখানেই ট্রফি নিয়ে উৎসবে মাতেন ফুটবলাররা। এসময় তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার।
এর আগে, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ডাউনিং স্ট্রিট পর্যন্ত ছিল লোকে-লোকারন্য। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ছাদখোলা বাসে ট্রফি প্যারেডের পর বাকিংহ্যাম প্যালেসে রাজকীয় সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।
ফুটবলের আঁতুরঘরে শেষবার বিশ্বকাপ এসেছিল ১৯৬৬ সালে। এরপর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ব্যাকহাম-জেরার্ড থেকে শুরু করে হালের রাশফোর্ড-বেলিংহ্যাম কারও ভাগ্যেই জোটেনি কোনো শিরোপার দেখা। কিন্তু অ্যালিসিয়া রুসো, লরেন জেমসদের হাত ধরে টানা দ্বিতীয়বার ঘরে আসলো ইউরোর ট্রফি।
লন্ডনের সাউথএন্ড বিমানবন্দরের দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল ফুটবলারদের বহনকারী বিশেষ বিমানটিকে। ইংলিশ ফুটবলের ব্যাজ সংবলিত, নাইকির লাল লোগো আর হোম লেখা এই উড়ুক্কুযানে করেই সুইজারল্যান্ড থেকে দেশের মাটিতে পা রাখেন ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। সেখানেই এক দফা ফটোসেশনে অংশ নেন সবাই।
এরপর বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রথম গন্তব্য টেন ডাউনিং স্ট্রিট। কিন্তু এত সহজে সেখানে যাওয়ার উপায় কই ? ফুটবলারদের বাস ঘিরে তখন মানুষের কোলাহল। সবাই এক নজর দেখতে চান সিংহীদের। কিন্তু সংবর্ধনার তাড়াহুড়ায় সমর্থকদেরকেই উপেক্ষা করলো এফএ। ফুটবলারদের আশেপাশে ভিড়তে দেয়নি কাউকেই। তারপরও ইংল্যান্ডের পতাকা উড়িয়ে ফুটবলারদের চিয়ার করেছেন তারা।
এরপর সেখান থেকে যাত্রা বিখ্যাত টেন ডাউনিং স্ট্রিটের দিকে। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী স্টেফানি পিকক এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়নার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে স্কটল্যান্ডে থাকায় রিসিপশনে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে বাইরেই আরেক দফা ফটোসেশন করেন ইউরো জয়ী দলের সদস্যরা।
পরে, সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান উপ-প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারলেও, টেলিফোনে সব ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানান নারী ফুটবলারদের। আর নারীদের এই অর্জন ইংল্যান্ডের আগামী জেনারেশনকে উদবুদ্ধ করবে বলে মন্তব্য করেন অ্যাঞ্জেলা রায়নার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সিংহীরা দেশে ফিরেছে। তারাই আসল চ্যাম্পিয়ন। পরপর দুবার তারা এই শিরোপা জিতেছে, এটা অবিশ্বাস্য। তারা শুধু একটা ট্রফি জেতেনি, এটা আমাদের আগামীর জেনারেশনকে উদ্বুদ্ধ করবে। তারা এখন এ দেশের মানুষের কাছে রোল মডেল। আমাদের সরকার নারীদের এই অর্জনে গর্বিত, আমরা কথা দিচ্ছি, তাদের প্রতিটা অর্জনে আমরা এভাবেই উদযাপন করব।’
টেন ডাউনিং স্ট্রিটে হেসে-খেলে সময় কাটান ফুটবলাররা। নিজেদের মধ্যেই খুনসুটিতেও মাতেন তারা। একে অন্যের সঙ্গে ছবি তোলা, খাওয়া-দাওয়া আর গল্প-আড্ডায় কেটে যায় সময়। এসময় নারী ফুটবলে সহযোগিতার জন্য এফএ এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হেড কোচ সারিনা ওয়েগম্যান।
তিনি বলেন, ‘আমরা পুরুষ ফুটবল দলের সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিনি। আমাদের আইডেন্টিটি আলাদা। আমরা একটা ভিন্ন টিম। তাই তারা পারেনি, আমরা পেরেছি, এভাবে ভাবতে চাই না। আমি এফএ'র কাছে কৃতজ্ঞ তারা তাদের বিনিয়োগ অব্যহত রেখেছে।’
এখানেই শেষ হচ্ছে না নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নদের আনন্দ যাত্রা। মঙ্গলবার সেন্ট্রাল লন্ডনে ট্রফি প্যারেডে অংশ নেবেন ফুটবলাররা। পরে, বাকিংহ্যাম প্যালেসে রাজকীয় সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসবের।
এফপি/এসএন