মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। এখানকার স্লো এবং লো বাউন্সের উইকেটে সাময়িকভাবে সাফল্য পেলেও বড় মঞ্চে এই মন্ত্র কাজে আসছে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও মিরপুরের পিচ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। তবে কখনোই খুব একটা আক্ষেপ করেনি বিসিবি।
গত পাকিস্তান সিরিজে দলটির কোচ এবং অধিনায়ক মিরপুরের পিচ নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেছিলেন। সাবেক ক্রিকেটাররদের অনেকেই সরাসরি না বললেও আদর্শ মানতে পারছেন না মিরপুরের এই পিচকে। এবার কোচ সোহেল ইসলামও উইকেট নিয়ে সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে মিরপুরের উইকেট সাধারণত বোলিং সহায়ক হয়। স্পিনারদের টার্ন পেতে দেখা গেলেও পেসাররা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাউন্স পান না। ব্যাটারদেরও খেলতে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়। ফলে মিরপুরের উইকেট একটি ধাঁধার মতো মনে হয় বাইরের দেশের ক্রিকেটারদের কাছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিয়মিত অনুশীলন করে এখানে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার সুযোগ পেলেও বাইরের দল পিচ বুঝে ওঠার সুযোগই পায় না।
এই মন্ত্রে দেশের মাটিতে অনেকবছর সাফল্য পেয়ে গেলেও বড় মঞ্চে ব্যর্থ বাংলাদেশ। গত ৮ বছরে কোনো টুর্নামেন্টেই বড় সাফল্য নেই টাইগারদের। দেশের বাইরে দলের এই বিপর্যয়ের পেছনে মিরপুরের এই উইকেটকে দায়ী করেন অনেকে। এবার ব্যাখ্যা বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন কোচ সোহেল ইসলাম।
বিসিবির বেতনভুক্ত কোচ সোহেল ইসলামকে মিরপুরে জাতীয় দলের অনুশীলনে প্রায়ই দেখা যায়৷ এই উইকেট এবং খেলোয়াড়দের সম্পর্কে তার ধারণা অনেক বেশি। ভালো উইকেটে খেলা কেন জরুরী এবং মিরপুরের মতো উইকেটে খেলা ক্রিকেটার ও দলের জন্য কেন ক্ষতিকর, সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
সোহেল বলেন, 'উইকেটের ওপর নির্ভর করে একটা ব্যাটারের ব্যাটিং প্যাটার্ন কেমন হবে। লো বাউন্স উইকেট হলে ব্যাটিংটাও তেমন হয়ে যায়।
সেখানে শট খেলতে ব্যাটাররা ভয় পায়। শট খেলতে হলে একটু ঝুঁকি নিতে হবে। আমাদের (বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের) মধ্যে এটা ঢুকে যায়। এর ফলে আমরা ভুগি। এমন না যে সবসময় ফ্লাট উইকেটে খেলতে হবে। সব ধরনের উইকেটেই মানিয়ে নেয়া শিখতে হিবে। ভিন্ন উইকেটে কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছে (দল) সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।'
এদিকে কয়েকদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে টেস্ট থেকে হারিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সৌম্য সরকার। এবার তার লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন কোচ সোহেলও।।
তিনি বলেন, 'আমরা যখন লাল বলের ক্রিকেট নিয়ে অনুশীলন করছিলাম, সৌম্য জিএসএলে খেলছিল। ফিরে আসার পর আমরা এখন সাদা বলের অনুশীলন শুরু করে দিয়েছি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে কেউই একটিমাত্র ফরম্যাটে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। সৌম্য নিজেও লাল বলের ক্রিকেটে খেলতে আগ্রহী, এবং তার সেই দক্ষতা ও সক্ষমতা উভয়ই আছে, কারণ সে আগেও টেস্ট ম্যাচ খেলেছে।'
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে সাদা বলের পার্থক্য অনেক বেশি। গত ৪ বছর ধরে টেস্ট ফরম্যাটে ডাক পান না সৌম্য। একটু আগ্রাসী ব্যাটার হওয়ায় সৌম্যকে সবসময় ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্যই বিবেচনা করা হয়। আর সাদা বল থেকে লাল বলে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থাৎ সৌম্যর টেস্টে ফেরার ক্ষেত্রে জটিলতাও দেখছেন কোচ সোহেল।
প্রশিক্ষণ এবং খেলার ধরনের বিস্তর ফারাক নিয়ে সোহেল বলেন, 'লাল বল ও সাদা বলের ক্রিকেটের মধ্যে খেলার ধরনে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
ব্যাটিং কৌশল, মানসিকতা, ম্যাচের পরিকল্পনা এবং শট প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। লাল বলে খেলার মানসিক কৌশল এবং টেকনিকগুলো কীভাবে কার্যকর করবে খেলোয়াড়রা সেটার প্রশিক্ষণ আমরা দেই। যারা এই ফরম্যাট থেকে ওয়ানডেতে যায়, তখন পরিস্থিতি ভিন্ন হয়; ওয়ানডেতে অনেক বেশি সিঙ্গেলস নিতে হয়।
অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে খেলার সময়, যে বলগুলোতে সাধারণত একক রান আসে, সেগুলোতেও আমরা বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করি। এভাবে খেলার ফরম্যাটের সাথে সাথে ব্যাটিংয়ের কৌশল এবং শট নির্বাচনও পরিবর্তিত হয়।'
এমআর/টিকে