চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সেনানিবাসের শহীদ ক্যাপ্টেন জসিম হলে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের অংশগ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা অনুযায়ী তার ময়নাতদন্ত করা হয়নি৷ সোমবার রাতে হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এদিকে, মৃত্যুর আগে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ তার চোখ দান করার ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তার চোখ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের একজন কর্মকর্তা জানান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনার পর চিকিৎসকরা তার মরদেহ পরীক্ষা করে দেখেছেন।
মৃত্যুর পর একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে আর চোখ নেওয়া যায় না। উনার ক্ষেত্রে এই সময়টা পার হয়ে গেছে। পরবর্তীতে জানাজা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে হারুন-অর-রশীদের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে৷ তারপর দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তার মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম সিএমএইচে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ছিলেন হারুন-অর-রশীদ। রোববার চট্টগ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এরপর ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ রুমে তিনি রাত্রিযাপন করেন। সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলায় তার হাজিরা দেওয়ার কথা।
কিন্তু সকালে তার মোবাইলে কল করা হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তার কক্ষের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে ডাকাডাকি করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে কক্ষের বারান্দায় থাকা গ্লাস ভেঙে বিছানায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে, পরিবারের লোকজনকে হারুন-অর-রশীদ জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়। তাকে যেন সাধারণ লোকের মতো দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার রাত ৮টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন জানান, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলছি৷ উনাদের মতামত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে কি না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে হারুন-অর রশীদের মরদেহ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে গিয়েছিলেন ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে সোমবার দিন ধার্য তারিখ ছিল৷ এ কারণে আমাদের সঙ্গে তার (হারুন-অর-রশীদ) আদালতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সময় হয়ে যাওয়ার পরও তিনি আসছিলেন না। তাকে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি গেস্ট হাউসে জানানোর পর কর্তৃপক্ষ তাকে কক্ষে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিএমএইচের চিকিৎসকদের একটি দল আসে। তারা এসে দেখেন, তিনি আর বেঁচে নেই।
এমকে/টিএ