যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ ও গৃহহীনতা দমনের ঘোষণা দিয়ে শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
একইসঙ্গে শহরের পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণও নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার “জননিরাপত্তা জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করে ওয়াশিংটনে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প। তারা সপ্তাহান্তে মোতায়েন করা ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “এটা এখন পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলাহীন পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে।”
তবে শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউসার প্রেসিডেন্টের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে অপরাধ বেড়ে গেলেও পরে তা কমে এসেছে। সহিংস অপরাধ এখন গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পর্যায়ে রয়েছে।
ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অপরাধ, রক্তপাত, বিশৃঙ্খলা ও নোংরামি থেকে আমাদের রাজধানীকে উদ্ধার করার জন্য আমি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিচ্ছি”। এ সময় তার পাশে ছিলেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি। মূলত ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে শহরের পুলিশ বাহিনী তিনিই পরিচালনা করবেন।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ওয়াশিংটন ডিসি “সহিংস গ্যাং, রক্তপিপাসু অপরাধী, মাদকাসক্ত ও গৃহহীনদের” দখলে চলে গেছে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ৩২ শতাংশ কমেছে, যা ২০১৯ সালের পর সর্বনিম্ন। এ বছরও আরও ১২ শতাংশ কমেছে।
ডেমোক্র্যাট মেয়র বাউসার স্বীকার করেন, ২০২৩ সালে অপরাধের বড় উল্লম্ফন হয়েছিল, তবে বর্তমানে কোনো অপরাধের বাড়তি মাত্রা নেই।
তিনি হোয়াইট হাউস কর্মকর্তার ওয়াশিংটনকে বাগদাদের চেয়ে বেশি সহিংস বলে করা মন্তব্যকে “অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা” বলেও আখ্যায়িত করেন।
ন্যাশনাল গার্ডের ৮০০ সদস্যের মধ্যে যে কোনো সময়ে ১০০-২০০ জন মোতায়েন থাকবে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, সপ্তাহের শেষ নাগাদ তারা পৌঁছে যাবে।
এ ছাড়া ট্রাম্প ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া হোম রুল অ্যাক্টের আওতায় শহরের পুলিশ বিভাগকে সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেবেন। এই আইন প্রেসিডেন্টকে বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ নিতে লিখিতভাবে কংগ্রেসকে জানানোর সুযোগ দেয়, তবে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে না।
গত রোববার এই সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র বাউসার বলেন, “আমাদের আইনে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আছে যেগুলোর কোনোটিই এখন বিদ্যমান নয়”। তিনি ন্যাশনাল গার্ড দিয়ে স্থানীয় আইন প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ট্রাম্পের আদেশকে “অশান্তিকর ও নজিরবিহীন” বলে আখ্যা দেন।
অপরাধের পাশাপাশি গৃহহীনতা নিয়েও ট্রাম্প মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমরা বস্তি গুঁড়িয়ে দিচ্ছি”। গৃহহীনদের অন্য কোথাও পাঠানো হবে বলে জানান, তবে কোথায় পাঠানো হবে তা বলেননি। তার যুক্তি, বিদেশি কূটনীতিক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরের সময় রাজধানী পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।
এমআর/টিকে