ভারত মহাসাগর পরিচিতি

আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর হলো ভারত মহাসাগর, যা ইন্ডিয়ান ওশেন নামে পরিচিত। প্রাচীনকালে গ্রীকদের কাছে এটি এরিথ্রিয়ান সাগর নামেও পরিচিত ছিল, যা পরবর্তীকালে ভারত মহাসাগর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

পৃথিবীর মোট জলভাগের ২০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এই মহাসাগরের উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরের মোট আয়তন প্রায় ৭৩,৪২৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের প্রধান তিনটি বাহু হিসেবে পরিচিত সাগরগুলো হলো- আরব সাগর (লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও পারস্য উপসাগর), বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর।

এর উত্তর সীমানায় ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইরান; পশ্চিমে আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকা; পূর্বে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ অবস্থিত।

ধারণা করা হয়, মেসোজোয়িক ও সেনোজোয়িক মহাকালে যখন গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে যেতে শুরু করে, তখন থেকেই ভারত মহাসাগরের সৃষ্টি। তবে বর্তমানকালে ভারত মহাসাগরের মহাদেশীয় সোপান অংশ সংকীর্ণ। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত জাভা খাতকে ভারত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চল বলা হয়, যা প্রায় ৭,৭২৫ মিটার পর্যন্ত গভীর।

পৃথিবীর অনেকগুলো বিখ্যাত এবং বৃহৎ নদীপ্রবাহ এই মহাসাগরে এসে মিশেছে। জাম্বেসী নদী, টাইগ্রীস ও ইউফ্রেতিসের মিলিত প্রবাহ শাত-ইল-আরব, সিন্ধু নদী, গঙ্গা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ এবং ইরাবতী নদী এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

ভারত মহাসাগরে মধ্য ভারতীয় শৈলশিরা (mid-Indian ridge) নামে একটানা প্রায় ৩,০৪৮ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নাতিদৈর্ঘ্য মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা রয়েছে।

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দুটি বৃহত্তম দ্বীপ- মাদাগাস্কার ও শ্রীলঙ্কা, ভূ-গঠনগত দিক থেকে এই মহাদেশেরই অংশবিশেষ। মহাসাগরের ভারতীয় শৈলশিরার কেন্দ্রভাগ থেকে উদীয়মান লক্ষ্যাদ্বীপ, মালদ্বীপ, চ্যাগোস প্রভৃতি দ্বীপসমূহ বর্তমানে প্রবাল দ্বীপে পরিণত হয়েছে।

সিসিলি থেকে মরিশাস পর্যন্ত বিস্তৃত ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহ ভারতীয় শৈলশিরার পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণকেই নির্দেশ করে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, সিসিলি দ্বীপ ও কেরগুয়েলেন দ্বীপপুঞ্জসমূহ নিমজ্জিত শৈলশিরার উন্মুক্ত অংশ বিশেষ। মরিশাস ও সেন্ট পল দ্বীপ দুইটি সামুদ্রিক অগ্নুৎপাত থেকে সৃষ্ট। এছাড়াও মহাসাগরের ক্রান্তীয় অংশে প্রবাল প্রাচীরের উপস্থিতি রয়েছে ।

ভারত মহাসাগরে দুই প্রকার পানি প্রবাহ বিদ্যমান, একটি নিয়ত দক্ষিণমুখী প্রবাহ এবং অন্যটি মৌসুমি বায়ুতাড়িত উত্তরমুখী প্রবাহ। মহাসাগরের উত্তরাংশের পৃষ্ঠ স্রোত মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বয়ে আনে, যার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

ভারত মহাসাগরে উপরিভাগে পানির গড় তাপমাত্রা মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রকম। যা একেবারে দক্ষিণে কেরগুয়েলেন দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি ২°সে, আবার লোহিত সাগর-পারস্য উপসাগর অংশে ৩০°সে পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তবে এর গড় উষ্ণতা অন্য যে কোনো মহাসাগরের তুলনায় বেশি। উষ্ণতার কারণে প্ল্যাঙ্কটন ও অন্যান্য উদ্ভিদের পক্ষে বেঁচে থাকাও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় ভারত মহাসাগরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণও অপেক্ষাকৃত কম।

তবে মজার ব্যাপার হলো- ভারত মহাসাগরের একেবারে দক্ষিণাংশে অ্যান্টার্কটিক থেকে আগত বরফ চূড়া ও হিমশৈল সারা বছর জুড়ে বিরাজমান থাকে।

ভারত মহাসাগরে পানির গড় লবণাক্ততাও একেক জায়গায় একেক রকম। মৌসুমি ঋতুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং নদ-নদীগুলো থেকে আগত মিঠাপানির প্রচুর প্রবাহের ফলে বঙ্গোপসাগরের সর্বত্র লবণাক্ততা হ্রাস পেয়ে ৩৪ পিএম (34 per mille) পর্যন্ত নেমে যায়।

মহাসাগরটির গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে, যার মধ্যে সুন্দর বনের নাম উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ সমূদ্রবন্দর সমূহের মধ্যে অনেকগুলির অবস্থান ভারত মহাসাগরে। চেন্নাই, মুম্বাই, কোলকাতা, চট্টগ্রাম, কলম্বো, ডুরবান, রিচার্ড বে, জাকার্তা, মেলবোর্ন প্রভৃতি শহরে এর বিখ্যাত বন্দরগুলি অবস্থিত। তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়াডটকম, উইকিপিডিয়াডটকম, বিটানিকাডটকম ও এনসাইক্লোপিডিয়াডটকম।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ