ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, নিশ্চল গাড়ির চাকা-এটাই যেন রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের চিত্র। সম্প্রতি এই শহরের সড়কে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের পরীক্ষামূলক ডাইভারশন। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া এই উদ্যোগ যেন যানজট আরও বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। পরিবহন বিশেষজ্ঞের দাবি, নগরীর ৬৯টি স্থানে চালু হওয়া এই ডাইভারশনে অল্পকিছু জায়গায় হয়ত সুবিধা মিলছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে যানজট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছে।
সম্প্রতি মহাখালী থেকে যাত্রী নিয়ে হাতিরপুলের দিকে যাওয়া সিএনজি চালক সাইফুলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড় পেরিয়ে হাতিরপুলের মুখে গিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। কারণ, সড়ক হঠাৎ করেই বন্ধ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পুরো ঢাকা শহরেই ডাইভারশন দিয়ে রেখেছে। সোজা রাস্তা বন্ধ রেখে দুই-এক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়ছে।’
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সম্প্রতি এই পথে ঢোকা বা বেরুনো দুটোই বন্ধ করেছে পুলিশ। যে কারণে সাইফুলের মতো প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন অসংখ্য যাত্রী ও চালক। গন্তব্যে যেতে প্রত্যেকটি যানবাহনকে অন্তত এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরতে হচ্ছে, সঙ্গে যানজট আছেই।
কারওয়ান বাজার থেকে পণ্যবাহী যানবাহন নিয়েও বিপাকে পড়ছেন চালকরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিকল্প রুটের যথাযথ তথ্য নেই, নেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও। উল্টো ডাইভারশন নিত্যদিনের চলাচলকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীবাসীকে যানজটের হাত থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ডাইভারশন কর্মসূচি চালু করেছে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী থেকে বিজয় সরণি হয়ে মিরপুরে যাবার মূল পথ বন্ধ থাকায় গাড়িগুলোকে দীর্ঘ পথ ঘুরে ইউটার্ন নিতে হচ্ছে। এতে উল্টো তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। একই চিত্র দেখা গেছে ডাইভারশন চালু থাকা বাকি মোড়গুলোতে।
এদিকে পুলিশ বলছে, নগরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে পরীক্ষামূলকভাবে এইসব ডাইভারশন চালু করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) তালেবুর রহমান বলেন, ‘মূল উদ্দেশ্য হলো যানজট কমানো এবং গাড়ির গতি বাড়ানো। এতে জনভোগান্তি কমবে।’
আর পরিবহন বিশেষজ্ঞের মতে, ডাইভারশনের মাধ্যমে সমস্যা যদি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয় তাহলে এটা ফলপ্রসূ কিছু বয়ে আনবে না।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘ইউটার্নের পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না, সেখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কি না-এসব বিবেচনায় না আনলে এক জায়গার সমস্যা অন্য জায়গায় সরবে। সমাধান হবে না।’
উল্লেখ্য, রাজধানীর ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডাইভারশন চালুর পর সম্প্রতি আরও ২৯টি মোড়ে একই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি। ফলে শহরজুড়ে ভোগান্তি যেন প্রতিদিনের অনিবার্য চিত্রে পরিণত হয়েছে।
ইএ/টিকে