সংস্কারে কর্ণপাত না করলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই মাসুল দিতে হবে: বদিউল আলম

সংস্কারের দাবিকে উপেক্ষা করলে তার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকেই বহন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘সংস্কারের পক্ষে জনগণের মতামত আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তা কর্ণপাত না করলে মাসুল দিতে হবে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার তার মাসুল দিয়েছে। যে পথে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে, অন্যরাও যদি অগ্রসর হয় তারাও দানবে পরিণত হবে।’ 

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপিত এম এ মতিনের সভাপতিত্বে সংলাপে তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া সুযোগ নেই। স্বৈরশাসকরা কিভাবে মাসুল দিয়েছে তা আমরা দেখেছি।

এমনকি শেখ হাসিনা পতনের বিষয়টি মনে রাখতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়বে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামীতে জুলাই সনদের সুপারিশগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য এগুলো বাস্তবায়িত করা দরকার। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের কাজ করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর এখানে দায়িত্ব আছে। তাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তা মেনে চলে না দলগুলো।

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়নে আমাদের স্বার্থকতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। সনদ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলেই এত দিনের কষ্ট স্বার্থক হবে। এখানে অনেকেরই করণীয় আছে। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার বলেন, ‘রাজনৈতকি অঙ্গনে যে অস্থিরতা তা যে শুধু জুলাই সনদ নিয়ে, তা সঠিক নয়। ভেতরে ভেতরে অনেক বিষয় কাজ করছে। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি কমিশন বার বার আলোচনার টেবিলে আনলেও বারবারই তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জুলাই সনদ কিভাবে বাস্তবায়ন হবে সেই সমঝোতায় পৌঁছানো যাচ্ছে না।

দলগুলোর আন্তরিকতা ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সফল হওয়া সম্ভব নয়।’

সংলাপে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য মো. একরাম হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন দেশের নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। নাগরিকরা দৃঢ়ভাবে মনে করেন, দুর্নীতি মোকাবেলায় দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এটি কমিশনকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরো বলেন, জরিপ ও সংলাপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুদকের কার্যক্রম অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে থাকে। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর কমিশন স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে এবং দুর্নীতি দমন কার্যক্রম আরো কার্যকর হবে।

সংলাপে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত হলে দুদককে পার্লামেন্ট বা সরকারের সরাসরি নির্দেশের বাইরে রাখা সম্ভব হবে। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু অনুসন্ধান বা অভিযোগ সমাধানে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি স্থায়ী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারবে। তবে, শুধুমাত্র শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার মাধ্যমে দুদকের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না।

সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে কমিশনের নীতি-নির্ধারণ, বাজেট ও পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপ কমানো সম্ভব হবে। এই প্রস্তাবনা সংসদে উপস্থাপন করলে দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। 

এমআর/এসএন    

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের ওষুধ শিল্পকে বৈশ্বিক মানে এগিয়ে নিতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান Dec 03, 2025
img
টিউলিপের বিচার ও দণ্ড প্রশ্নে দুদকের ব্যাখ্যা Dec 03, 2025
img
ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া: রাশেদ খান Dec 03, 2025
img
দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি: শিক্ষা উপদেষ্টা Dec 03, 2025
img
সুনামগঞ্জে ৪৭ হাজার ২৪২ ঘনফুট অবৈধ পাথর জব্দ Dec 03, 2025
img
এবার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা Dec 03, 2025
img
কর্মবিরতি স্থগিত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের, বুধবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা Dec 03, 2025
img
মনকে আর বুঝাতে পারিনি, তাই চলে আসলাম, খালেদা জিয়াকে দেখতে এসে জামায়াত আমির Dec 03, 2025
img
বেগম জিয়ার এমন সংকটময় পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি: জামায়াত আমির Dec 02, 2025
img
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি মহৎ অঙ্গীকার : পার্বত্য উপদেষ্টা Dec 02, 2025
img
মুগদা থানার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামাদ উদ্দিন বিজয় গ্রেপ্তার Dec 02, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় প্রাণহানিতে প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ Dec 02, 2025
শ্রীলঙ্কায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে বাধা দিচ্ছে ভারত, অভিযোগ পাকিস্তানের Dec 02, 2025
img
পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় পক্ষভুক্ত হলো বিএনপি, শুনানি আগামীকাল Dec 02, 2025
img
অবশেষে একই ফ্রেমে প্রিয়াঙ্কা-আলিয়া-ক্যাটরিনা Dec 02, 2025
'আল্লাহ খালেদা জিয়াকে নেক হায়াত দাও' Dec 02, 2025
সিরিয়ার দক্ষিণে ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের সতর্কবার্তা Dec 02, 2025
রাজশাহী নগরবাসীর নিরাপত্তায় আরএমপির বিশেষ উদ্যোগ Dec 02, 2025
img
আমাদের নেত্রীর জন্য অন্তর থেকে সবাই দোয়া করবেন: টুকু Dec 02, 2025
শতভাগ ফিট না থাকলে দলে যায়গা পাবেন না নেইমার, ভিনি: আনচেলত্তি Dec 02, 2025