বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, ‘এখন রাজনীতি অঙ্গনে একদল তরুণ, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তাদের মুখে একটা স্লোগান শোনা যায়, বিদ্যমান ১৯৭২ সালে প্রণীত যে সংবিধান, সেটি ছুড়ে ফেলতে হবে। এটি তো আওয়ামী লীগের সংবিধান না। তারা জানেও না, আওয়ামী লীগ তো স্বাধীনতাই চায়নি।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধারা আমৃত্যু আপসহীন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন হাফিজ উদ্দিন।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন ‘২৫ মার্চ মিলিটারি ক্র্যাক ডাউনের কিছুক্ষণ আগে তাজউদ্দীন সাহেব, তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে বলেছেন, টেপ রেকর্ডার নিয়ে এসেছি আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে ঘোষণা করুন। তিনি বললেন না আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারি না।
তিনি অখণ্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, এই কারণেই বলেছেন যে, আমি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিই তাহলে আমাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। আমার বিচার করা হবে। ২৫ মার্চেও তিনি চিন্তিত যে তাকে পাকিস্তান ভাঙার জন্য অভিযুক্ত করা হতে পারে।
অথচ তার দল বলে তিনি নাকি ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কতখানি জঘন্য মিথ্যা। এ কথাটি এ জন্য বললাম যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা চায়নি। চাওয়া সম্ভব না তারা করে ভোটের রাজনীতি।’
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
১৯৭২ সালের রচিত সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ফসল বলে উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যারা যুদ্ধ করেছি, আমরা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেলাম। যে ছাত্ররা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তারা স্কুল-কলেজে ফিরে গেল। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি আমাদের কোনো লোভ ছিল না। আমরা দৃষ্টিপাত করি নাই সেখানে। ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসতে পেরেছে ভারতের আনুকূল্য নিয়ে। সুতরাং যে সংবিধানটি ৭২ সালে প্রণীত হয়েছে, এটি মুক্তিযুদ্ধের ফসল। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সেখানে ঘটেছে। ঘটনাচক্রে আওয়ামী লীগ সেখানে ছিল। এটাকে আমি আওয়ামী লীগের সংবিধান মনে করি না।’
রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য নিয়ে যে জুলাই সনদটি গৃহীত হবে, সেটি সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে, এমনটা কখনো হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি দ্বারা সংবিধান সংশোধন হতে পারে না বলেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ঠিক করবেন বাংলাদেশের সংবিধান কী হবে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তারা বলে সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দিতে হবে। এটা অবান্তর কথা।’
সংখ্যানুপাতিকপদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, তিনটি দল ব্যতীত পিআর পদ্ধতি কেউ চায় না। যাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা ছিল না, তাদের বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার দরকার কী। দেশের জনগণের ঠিক করবে, তারা আগামী নির্বাচনে কী ব্যবস্থা চায়। তারা কোন ধরনের সংবিধান চায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কী কী তারা সংস্কার চায়, জনগণের ঠিক করবে এসব।
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ আলফাক। মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি শহীদ বাবলুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
টিকে/