ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস, খুলনায় আ. লীগ নেতা বহিষ্কার

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় জেরে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও বাংলা‌দেশ মে‌ডি‌কেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোল্যা জালাল উদ্দিন, সহসভাপতি কাজী বাদশা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফরিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

একইসঙ্গে ডা. বাহারুলকে দল থেকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাহারুল আলম বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা সত্য। যদিও সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী আগে কারণ দর্শানো হয়, তার জবাব যদি সন্তোষজনক না হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখন তো আর সংগঠনের নিময় নীতি কেউ মানে না। তাই এমনটা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ওই স্ট্যাটাসটি দিয়েছি একান্ত ব্যক্তিগতভাবে, দেশকে ভালোবেসে। দেশের প্রতি ভালোবাসা আমার সংগঠনের ঊর্ধ্বে, আমার জীবনের ঊর্ধ্বে। আমাকে সংগঠন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি দল নিয়ে কিছু বলিনি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কিছু বলিনি। শুধু ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বলেছি, যে সব বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে। এইটুকু যে বলা যাবে না, এটা হতে পারে না।

বাহারুল আলম বলেন, সংগঠন থেকে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা একমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে। দলের যেহেতু পুরনো কোন্দল ছিল তাই কাউকে সরানোর সুযোগ ছিলা না। এখন এ সুযোগটা তারা কাজে লাগিয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি নিয়ে গত ৬ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ডা. শেখ বাহারুল আলম। যা বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। বাংলাদেশ টাইমস এর পাঠকদের জন্য তার সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।

“ভারত–বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বলা হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ ও অধিকার চরম উপেক্ষিত
...........................
দুর্বল অবস্থানে থেকে বন্ধু-প্রতিম শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে-ফলাফল শক্তিধরের পক্ষেই আসে। বাংলাদেশ- ভারত উভয়-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারক নাম দেয়া হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় দুর্বল রাষ্ট্রকে।

ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থই আদায় করে নিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এখনও ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।

১) দীর্ঘদিনের আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন এবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পায়নি।

২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুংকার দিয়েছে নাগরিকপঞ্জীতে বাদ পড়া জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে। তারপরেও এবারের সমঝোতা চুক্তিতে ‘অভ্যন্তরীণ’ অজুহাতে বিষয়টি স্থান পায়নি।

৩) বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত কিছু বলেনি।

৪) তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুপ থাকলেও বাংলাদেশ অংশের ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল হিসেবে প্রতিদিন ১.৮২ কিউসেক টেনে নেবে ভারত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।

৫) বাংলাদেশের জনগণের তরল গ্যাসের চাহিদা পূরণের ঘাটতি থাকলেও ভারতে তরল গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যৌথভাবে সে প্রকল্প উদ্বোধনও হয়েছে।

৬) চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারত কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য ভারতের কোনও বন্দর সেই তালিকায় ছিল না।

অমানবিক আচরণের শিকার হয়েও বাংলাদেশ পানি ও গ্যাস সরবরাহ দিয়ে মানবিকতার প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার উপেক্ষিত রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হয়েছে।

শক্তিধর প্রতিবেশীর আধিপত্যের চাপ এতোই তীব্র যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কিনা আশংকা হয়। কারণ ভারতের চাপিয়ে দেওয়া সকল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হচ্ছে।”

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এআই নিয়ম কঠোর করার পরিকল্পনা করছে ভারত Oct 23, 2025
img
বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার দাবি ‘আয়নাঘর’ থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের Oct 23, 2025
img
পাওলি দাম ফের আলোচনায়, এবার ত্রৈলোক্যতারিণী চরিত্রে Oct 23, 2025
img
একটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজছে: সালাহউদ্দিন আহমদ Oct 23, 2025
img
উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত Oct 23, 2025
img
গোপন কথা ফাঁস করলেন করণ, হতবাক জাহ্নবী Oct 23, 2025
img
আমার কোনো অনুশোচনা নেই: সাকিব Oct 23, 2025
img
চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত Oct 23, 2025
img
ছোট্ট দুয়াকে আদর করে কী নামে ডাকেন দীপিকার বোন? Oct 23, 2025
img
কাতার থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব তুরস্কের Oct 23, 2025
img
বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্তের জামিন নামঞ্জুর Oct 23, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে পরবর্তী আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর Oct 23, 2025
img
এক সিনেমার জন্য আরেকটি ছাড়লেন সাবিলা Oct 23, 2025
img
কিছু দল নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল Oct 23, 2025
img
দারুণ খেলেও সেঞ্চুরি মিস সাইফের Oct 23, 2025
img
তুলসীর চরিত্রে ফের স্মৃতি, সঙ্গে মিলছে বিশেষ অতিথি! Oct 23, 2025
img
টাস্কফোর্সের ৬ মাস সময় চাওয়া ‘অযৌক্তিক’: শিশির মনির Oct 23, 2025
img
জনগণের কথা রাখার দল বিএনপি : শামসুজ্জামান দুলু Oct 23, 2025
img
এখন ঘোষণা দিয়ে আ. লীগে যোগ দেওয়া সাহসের ব্যাপার : মোস্তফা ফিরোজ Oct 23, 2025
img
দুই ওপেনারের ফিফটিতে ঝড়ো শুরু বাংলাদেশের Oct 23, 2025