জিল্লুর রহমান

রাজনীতিতে নতুন নাটকীয় অস্থিরতা জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও নতুন এক নাটকীয় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে। অনেকে প্রথমে ভেবেছিলেন, এটি শুধু আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের দোসর হিসেবে জাপাকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টার অংশ। কিন্তু আসল বিষয়টি এত সরল নয়। এর পেছনে আছে নির্বাচনী সমীকরণ।

সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, জাপার ইতিহাসটা একটু দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সদ্যগঠিত দলটি ৪২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। যদিও সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ, সে সময় বিএনপি অংশ নেয়নি।

জামায়াত পায় মাত্র ৪.৫৪ শতাংশ ভোট। দুই বছর পর ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভোট বর্জন করলে জাতীয় পার্টি ৬৮.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আবার সরকার গঠন করে। তবে ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর চিত্র পাল্টে যায়। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পায় ১১.৯ শতাংশ ভোট ও ৩৫টি আসন।

জামায়াত পায় ১২.১৩ শতাংশ ভোট এবং ১৮টি আসন। বিএনপির সঙ্গে অলিখিত সমঝোতার কারণে জামায়াত আসনে লাভবান হয়। এর পর থেকে জাপার আসনসংখ্যা ও ভোটের হার ক্রমশ কমতে থাকে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার ভোট ১৬.৪ শতাংশ, আসন ৩২টি। ২০০১ সালে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে তারা পায় মাত্র ১৪টি আসন।

আর জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোটে সরকারে যায়। এক-এগারোর পর তাদেরও পতন ঘটে। ২০০৮ সালে আবারও ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৭টি আসন পায়। জামায়াতও কিছুটা টিকে থাকে। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জাপা ৩৪ আসন পায় এবং বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেও সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা নেয়। ২০১৮ সালে তাদের আসন কমে দাঁড়ায় ২২টিতে আর ভোটের হার নেমে যায় মাত্র ৭ শতাংশে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় প্রাপ্ত আসন হলেও ভোটের অঙ্কে দলটির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাদের আসনসংখ্যা নেমে আসে মাত্র ১১-তে। আওয়ামী লীগ ২৬ আসনে ছাড় দিলেও বেশির ভাগ আসনে জামানত বাজাতে হয়। এই দীর্ঘ পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে জাতীয় পার্টি এখন দুর্বল। কিন্তু ভোটের মাঠে তাদের কিছু কৌশলগত গুরুত্ব আছে। আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকের একটা অংশ বরাবরই জাপার পাশে গেছে। যদি আওয়ামী লীগ এবারও দুর্বল হয় বা নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে, সেই ভোটগুলো জাপাকে ভাসিয়ে দিতে পারে। তখন বিরোধী দল হিসেবে জামায়াত নয়, জাপা সামনে চলে আসতে পারে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে জাপা নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। কেউ কেউ মনে করছেন এর পেছনে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য জাপাকে বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, গণ অধিকার পরিষদ বুঝে ফেলেছে যে জাপার ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ হয়তো নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকতে চাইবে। তাই তারা আগেই এই দাবিকে সামনে এনে জাপাকে দুর্বল করছে।

জিল্লুর আরো বলেন, গত সপ্তাহে নুরুল হক নূরের ওপর হামলার ঘটনা এই অস্থিরতাকে আরো তীব্র করছে। গণ অধিকার পরিষদ ও জাপার মধ্যে সংঘর্ষ, জাপার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ- এসব মিলে এক ধরনের গুমোট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরাও বলছেন যে নির্বাচন কমিশন যখন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, ঠিক তখনই এসব সহিংস ঘটনা ঘটছে— এটি কাকতালীয় নয়। প্রশ্ন উঠছে, সরকার এ পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা রাখছে? একজন দলের প্রধানকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করা হয়। অথচ সরকারের ভেতর থেকে কেউ কেউ আবার নিন্দা জানায়, চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। এতে সরকারের ভেতরে বিভক্তি ও দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের সভা Oct 25, 2025
মিথ্যা মামলায় জামায়াত নেতা নিজামী-কাসেম-সালাউদ্দিনকে ফাঁসির অভিযোগ ফখরুলের Oct 25, 2025
উচ্চশিক্ষায় আসন বেড়েছে দ্বিগুণ, নেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী Oct 25, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ জামায়াতের Oct 25, 2025
রাজশাহী রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত Oct 25, 2025
img
রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে ইয়ামালের অসম্মানজনক মন্তব্যে চুপ জাবি আলোনসো Oct 25, 2025
img
প্রশাসনই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রাণশক্তি : ফারুক-ই-আজম Oct 25, 2025
img
বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে আইএমএফের প্রশংসা Oct 25, 2025
img
মানুষের কাছে বিএনপির জনপ্রিয়তা শীর্ষে : টুকু Oct 25, 2025
img
সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি আমরা: গৌরব চট্টোপাধ্যায় Oct 25, 2025
img
ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেন কমলা হ্যারিস Oct 25, 2025
img
প্রথম দিনেই আরিফুল-মার্শালের সেঞ্চুরি ! Oct 25, 2025
img
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বড় জয় অস্ট্রেলিয়ার Oct 25, 2025
img
দুর্বৃত্তদের হামলায় পৌরসভার ৩ গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত Oct 25, 2025
img
নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন তুরস্কের Oct 25, 2025
img
দেশের উন্নতি চাইলে দুর্নীতিকে না বলুন : মাসুদ সাঈদী Oct 25, 2025
img
সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে ইসিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৪ প্রস্তাব Oct 25, 2025
img
লাইভে এসে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সালমান শাহের ভাই Oct 25, 2025
img
বাড্ডায় অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন সরাতে ডিএনসিসির অভিযান Oct 25, 2025
img
পুলিশকে কামড় দিয়ে আসামিকে নিয়ে গেল আ.লীগের কর্মীরা Oct 25, 2025