গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন : প্রিন্স

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ডাকসু বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির সুতিকাগার। এই বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। চিন্তা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির বিরোধীরা বিজয়ী হয়?


এই নির্বাচনে স্বৈরাচার আর রাজাকার একাকার হয়ে গেছে। এটা বিজয় নয়, ছাত্র-জনতার বিজয় কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন, ফলাফলে এটাই প্রমাণ হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা অনুমান করছিলাম কিন্তু ব্যর্থ করে দিতে পারি নাই। এটা আমাদের ব্যর্থতা অস্বীকার করব না।


বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর জেলা পরিষদ সভাকক্ষে মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দল এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। পত্রিকায় দেখলাম, দিল্লিতে বসে তার আমলে সুবিধা নেওয়া শিল্প মালিকদের কাছ থেকে শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছেন দেশের গণতন্ত্র এবং আগামী নির্বাচনকে নস্যাৎ করতে। সেই টাকার উত্তাপ আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। গতকাল ডাকসু নির্বাচনেও সেই টাকার উত্তাপ কি-না, সেটা প্রশ্ন থেকে যায়।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা হত্যার রক্তে রঞ্জিত স্বৈরাচারের হাত, আর ওই হাতে হাত মিলিয়েছে জামায়াত। অবশ্য এই সখ্যতা তাদের নতুন নয়, ১৯৮৬ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত হাত মিলিয়ে আরেক স্বৈরাচার এরশাদকে বৈধতা দিয়েছিল। যাদের হাতে জামায়াতের নেতাদের রক্ত, যারা গত ১৫ বছরের তাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ক্ষমতার লোভে হাত মিলিয়েছে জামায়াত। গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগ ঢাবিসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। ছাত্রদলসহ অন্য সংগঠন সেখানে কাজ করতে পারে নাই। অথচ জামায়াতের সংগঠন ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের শরীরের সঙ্গে মিশে সেখানে কাজ করেছে। ৫ আগস্টের আগে শিবিরের নেতারা ছিল ছাত্রলীগের নেতা, কিন্তু ৫ আগস্টের পর তারা ছাত্রশিবিরের নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা গুপ্ত সংগঠন। কিন্তু ছাত্রদল ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনো আপস করে নাই।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন, আমাদের নেতা তারেক রহমান আপসহীন। ছাত্রলীগের সঙ্গে আপস করলে ছাত্রদলও ডাসকুতে ভালো অবস্থান করতে পারতো। ছাত্রশিবির কোনোভাবেই ডাকসুতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে জয় লাভ করতে পারে নাই। প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এতে ছাত্রলীগর ভোটও কাস্ট হয়েছে। এই ছাত্রলীগের ভোট গেল কার পকেটে ? এটা অনুসন্ধান করলেই শিবিরের বিজয় কীভাবে হয়েছে, তা সহজেই অনুমান করতে পারব। পাশাপাশি হয়েছে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। এখানেও চক্রান্ত আছে।

তিনি বলেন, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি দেশে ফিরে আসতে চান, কিন্তু এটা দেশের জনগণের আশ্রয় প্রশয়ে বা ভোটে সেটা হবে না। সেই কারণে ষড়যন্ত্র করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখাতে চান যে- বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হয়েছে। সে কারণে ডাকসু নির্বাচনে শিবিরকে জিতিয়ে এনেছে। তারা ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বহির্বিশ্বকে দেখাতে চায় যে- বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হয়েছে। বিএনপি এই দক্ষিণপন্থিদের মোকাবিলা করতে পারবে না, অতএব বাংলাদেশে ফিরে যেতে তোমরা আমাকে সহায়তা করো। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন।

ডাকসু নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে দাবি করে প্রিন্স বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিবির ছাড়া ছাত্রদল, বাম সংগঠনসহ সকল সংগঠন, সকল প্যানেল অভিযোগ করেছে- জামায়াতকানা ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করেছে। ভোট কারচুপি ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথাও তারা বলেছে। কেউ কেউ এই নির্বাচন বয়কটও করেছে। এতে আমাদেরও কিছু দায় আছে, জামায়াতকানা ভিসি এবং প্রশাসনের অধীনে কেন ছাত্রদল বা অন্য সংগঠনগুলো নির্বাচনে গেল। এটাও প্রশ্নের বিষয়। নিরপেক্ষ নির্বাচনে আমরা হেরে গেলেও কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যে নির্বাচনে রাজাকার আর স্বৈরাচার এক হয়ে যায় সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তাই আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। এই নির্বাচনে আমাদের চোখ খুলে গেছে। স্বৈরাচার-রাজাকার হাত মিলিয়েছে, তাদেরকে রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে।

জামায়াত-শিবির মুনাফেক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের যখন আওয়ামী লীগ ফাঁসি দিয়েছিল, তখন বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সুরক্ষা দিয়েছিল। আজকে জামায়াত তা বেমালুম ভুলে গেছে। যারা ফাঁসি দিয়েছিল তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ৫ আগস্টের পর জামায়াতের আমির বলেছিল- আমরা আওয়ামী লীগকে মাফ করে দিলাম, ভারতকে মাফ করে দিলাম। ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসর্ম্পক বজায়ে রাখতে হবে। আজকে ডাকসুর নির্বাচনে সেটার প্রতিফলন আমরা দেখলাম। আসুন আত্মবিশ্লেষণ করি, আমাদের তরুণ সমাজকে অশুভশক্তির কালো থাবা থেকে রক্ষা করি। একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের পথে ‘জেন-জি’ কে ফিরিয়ে আনি।

আলোচনা সভায় উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজিল চৌধুরী লিলির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা নিলুর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ আজিজুল হক, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কামাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেল, মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক হযরত আহমেদ শাকিল প্রমুখ।

এদিকে মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে উত্তর জেলা মহিলা দল। এ সময় র‌্যালিটি নগরীর কাচারি সড়ক হয়ে জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এতে উত্তর জেলার অধীনস্থ হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলার মহিলা দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। এ সময় একজন শিশু সমর্থক নিজেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজে সজ্জিত করে র‌্যালিতে অংশ নিয়ে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানায়। পরে কেক কেটে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অভিনন্দন জানিয়ে সাদিক কায়েমের কাছে দাবি জানালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ Sep 11, 2025
img
আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে কী ঘটছে দেখুন : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট Sep 11, 2025
img
বাংলাদেশে বিএনপি একমাত্র দল যার কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ : শামা ওবায়েদ Sep 11, 2025
img
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক Sep 10, 2025
img
এনসিপি থেকে সাবেক ২ সেনা কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘোষণা Sep 10, 2025
img
ছক্কার চেয়ে স্মার্ট ক্রিকেটে বেশি মনোযোগ লিটনের Sep 10, 2025
img
ইসরায়েলি হামলার পরদিনই কাতার গেলেন আমিরাতের প্রেসিডেন্ট, যাচ্ছেন বিন সালমানও Sep 10, 2025
img
৩৩ বছর পর আগামীকাল জাকসু নির্বাচন, ভোটে লড়বে ৮ প্যানেল Sep 10, 2025
img
শুভশ্রী বা রুক্মিণী নন, জীবনে প্রথম দিয়া মির্জাকে মন দিয়েছিলেন দেব! Sep 10, 2025
img

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী

ভারত বিরোধিতার কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছি Sep 10, 2025
img
এশিয়া কাপে হেসে খেলেই আমিরাতকে হারাল ভারত Sep 10, 2025
img
কুলদীপের দাপটে বোলিংয়ে ৫৭ রানেই অলআউট আমিরাত Sep 10, 2025
img
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস যোগাতে পারে নৈতিক শিক্ষা: উপদেষ্টা আদিলুর রহমান Sep 10, 2025
আগামী ডাকসু নির্বাচনে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিলেন আবিদ Sep 10, 2025
img
ডাকসু নির্বাচন বিএনপিকে সতর্ক সংকেত দিয়েছে: সেলিমা রহমান Sep 10, 2025
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে শিবির সমর্থিতদের জয়জয়কার Sep 10, 2025
‘ছাত্রলীগের সবাই শিবিরকে ভোট দিয়েছে’ Sep 10, 2025
img
এশিয়া কাপে কর্মীদের জন্য ৭০০ টিকিট কিনে চমক দিলেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী Sep 10, 2025
ক্যারিয়ার ও জীবনে ইমোশনের প্রভাব নিয়ে শ্রাবন্তী Sep 10, 2025
কেন যেন মডেল হিসেবেই বারবার আখ্যায়িত হচ্ছি Sep 10, 2025