চলতি সপ্তাহের শুরুতে দুই দিনের গণবিক্ষোভে নেপালজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, এ বিক্ষোভে ২০০ বিলিয়ন রুপির বেশি মূল্যের সরকারি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিভিন্ন ভবন ধ্বংসের পাশাপাশি ঐতিহাসিক দলিলপত্র এবং নথিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) নেপালি সংবাদমাধ্যম খবরহাব এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটিকে নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন— সিংহ দরবার (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয়), পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলেছেন, “এই স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগই সংস্কারের অযোগ্য। ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করা গেলেও এগুলো সেভাবে করা যাবে না। এ স্থাপনাগুলো নতুন করে তৈরি করতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন রুপি খরচ হবে।" তিনি আরও জানান, এই হিসাবের মধ্যে শুধু ভবনগুলোর খরচ ধরা হয়েছে। এরসঙ্গে অন্য আরও খরচও রয়েছে। নেপালে বিক্ষোভকারীরা শুধুমাত্র রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি অবকাঠামোই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেননি। তারা একাধিক প্রদেশের বিধানসভা হল, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, কারাগার, পুলিশ স্টেশন, ভূমি ও রাজস্ব অফিস এবং অসংখ্য পৌর ওয়ার্ডের ভবন পুড়িয়ে দিয়েছেন।
নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে রাজধানী কাঠমান্ডুতে। তবে পোখারা, ইতাহারি, জনকপুর, ধানগধি এবং বিরাটনগরের মতো বড় শহরগুলোতেও সরকারি অফিসগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীা শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, তারা ব্যক্তিগত সম্পদকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি, ব্যবসায়িক কমপ্লেক্স, পর্যটন অবকাঠামো, গাড়ির শোরুম, গণমাধ্যম কার্যালয়সহ অনেক কিছুতে আগুন দিয়েছেন।
গত সোমবার বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ১৯ জন মারা গেলে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা সরকারি স্থাপনাগুলোতে আগুন দেওয়া শুরু করেন।
এই গণবিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। সরকারি অবকাঠামোতে ভাঙচুর চালানোয় সরকারি কর্মকাণ্ড থমকে গেছে। সুপ্রিম কোর্টের ভবন পুড়িয়ে দেওয়ায় এখন তাঁবুতে অফিস বানিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা চলছে।
গণবিক্ষোভে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের পর এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সরকার গঠন হলে ওই সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠক করার মতো স্থানও অক্ষত নেই।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন রুপি বলা হলেও এ সংখ্যা বাস্তবে আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে নেপালের নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।
ইউটি/টিএ