রোহিঙ্গাদের পেছনে আর কোনো অর্থ খরচ করতে চাই না: ড. খলিলুর

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, আগামী ৩ থেকে ৪ বছর পরে আমরা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের পেছনে আর কোনো অর্থ খরচ করতে চাই না। বরং এ অর্থের অংশ মিয়ানমারের খরচ করতে চাই, যেখানে রোহিঙ্গারা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে।তাদের ভবিষ্যত ফিরিয়ে দিন। নিউইয়র্কে এক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে উপদেষ্টা ড. খলিলুর এ কথা বলেন।


২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ‘বিশ্ব শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থা: কী ভুল হয়েছে এবং কীভাবে এটি ঠিক করা যায়’ শীর্ষক একটি আলোচনার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। এ আলোচনার মূল আয়োজক  ছিলেন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ।  

এতে আলোচক হিসেবে যোগ দেয় পানামা, লাইবেরিয়া, বাংলাদেশ এবং কসোভোর প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া অন্যান্য দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাখাইনের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা নিজ গ্রামে ফেরত যেতে শুরু করেছে। সেখানকার গ্রাম প্রশাসনেও রোহিঙ্গারা প্রতিনিধিত্ব করছে। আর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনের প্রধান একটি শহরে গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে জাতীয় নিরপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জনগণ ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়েছিল। এর কারণে এক কোটির মতো বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সৌভাগ্যবশত যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশি দিন থাকেনি। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল। আর বাংলাদেশিরা সবাই দেশে ফেরত এসেছে।

তিনি বলেন, সে সময়ের থেকে ৫০ বছর সামনে এগোলে বর্তমানে ১২ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী শিবিরে একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন।   যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যানুযায়ী রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার কারণে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, গত আট বছরে বিশ্ব রোহিঙ্গাদের পেছনে পাঁচশ কোটি ডলারের ওপর খরচ করেছে। দাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাংলাদেশও হয়তো বিভিন্ন উপায়ে অর্থের বাইরে এর থেকে অনেক বেশি ব্যয় করেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের ওপর বিশ্ব কত অর্থ ব্যয় করেছে? এক টাকাও ব্যয় করেনি। তাদের জমি উর্বর। তাদের থেকে আমরা খাদ্য ক্রয় করতাম। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশকে দরকার নেই, বরং বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের করের অর্থসহ যত অর্থ রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে, একেবারেই জলে গিয়েছে।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা ফেরত পাঠাতে পারি না। কিন্তু তাদের ইচ্ছাটা কী? যখন রোহিঙ্গা শিবিরে পরিদর্শনে গিয়েছেন, তখন ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার আপনি দেখেছেন যে তারা ফেরত যেতে আগ্রহী। গত রমজানের সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কক্সবাজার সফরে সব রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অবশ্যই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা তাদের মিয়ানমারে ঠেলে দিতে পারি না। তবে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কি তাদের আমরা রেখে দেবো? তারা ফেরত যেতে চায়।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক তহবিল সংগ্রহের জন্য বর্তমানে চেষ্টা চলছে, যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতদিন তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাদের খাওয়াতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে। কিন্তু সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমি অনেক কম প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আমাদের জনগণের করের অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছি, তবে সমস্যাটি সমাধানে যথেষ্ট রাজনৈতিক হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করছি না। এতে করে প্রতিবছর রোহিঙ্গা শিবিরে ৩০ হাজার শিশু অন্ধকার ভবিষ্যত নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। ফলে তাদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করি, তারা অন্য কোনো মানুষের থেকে কম নয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে কি আমরা তাদের সৌভাগ্যবান বানাতে পারি না।

রাখাইনের কিছু ভালো খবর আছে জানিয়ে ড. খলিলুর রহমান বলেন, মিয়ানমার রাখাইন, যেখান থেকে রোহিঙ্গারা এসেছে, তার ৮৫–৯০ শতাংশ অঞ্চল আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে। তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। গত সপ্তাহে আরাকান আর্মি আমাকে ছবি পাঠিয়েছে। যেখানে দেখেছি, আরাকান আর্মি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাখাইনে ক্যাম্প থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে নিজ গ্রামে ফেরত এসেছে। রোহিঙ্গা থেকে গ্রামের প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। আরাকান আর্মি নতুন কিছু মসজিদ নির্মাণ করেছে। তারা প্রধান বড় শহরে একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করেছে। রাখাইনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এটাই সময়, যখন আমাদের রাজনৈতিকভাবে এ সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

সবাইকে আহ্বান জানিয়ে ড. খলিলুর রহমান বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের একত্র হতে হবে। এ সংকট সমাধানে আমরা রাজনৈতিকভাবে বিনিয়োগ করব, এ নিয়ে আমাদের নিজের কাছে ও শরণার্থীদের কাছে অঙ্গীকার করতে হবে।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অনেক দেশই এতে অংশ নেবে। রোহিঙ্গারা সংকট সমাধানের প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। রোহিঙ্গারা অপেক্ষায় রয়েছে যে বিশ্ব অন্তত কিছু করতে চায়। বিশ্ব রোহিঙ্গাদের সহায়তা করবে বাড়ি ফিরে যেতে, এ প্রত্যাশায় তারা রয়েছে। তারা বাড়ি ফিরতে চায়। দয়া করে তাদের বাড়ি ফেরার সুযোগ করে দিন।

অনুষ্ঠান সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো পুরোনো এবং ভাঙা আন্তর্জাতিক শরণার্থী ও আশ্রয় ব্যবস্থার সমস্যাগুলো এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে এ সমস্যাগুলোর সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।  

এ অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থার অপব্যবহার বন্ধ করতে এবং সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা তাদের ন্যায্যপ্রাপ্য পেতে নিশ্চিত করার জন্য এ ব্যবস্থার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর দীর্ঘস্থায়ী আন্তর্জাতিক আলোচনার শুরু।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img

সাদিক কায়েম

কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমাদের আবারও রাস্তায় নামতে হবে Nov 15, 2025
img
হরমুজ প্রণালী থেকে তেলবাহী ট্যাংকার আটক করল ইরান Nov 15, 2025
img
জামায়াত আমাদের পুরনো বন্ধু, ভাইয়ে ভাইয়ে আর লড়াই না করি : জয়নুল আবদিন ফারুক Nov 15, 2025
img

মোস্তফা ফিরোজ

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে ইউনূসের ওপর ব্রিটেন-ভারতের চাপ বাড়ছে Nov 15, 2025
img
আসছে বি ইউ শুভর নতুন নাটক 'শুধু তোমারই অপেক্ষায়' Nov 15, 2025
img
রাজধানীতে নিষিদ্ধ যুবলীগের ৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Nov 15, 2025
img
মুস্তাফিজের যেসব সতীর্থদের ছেড়ে দিলো দিল্লি Nov 15, 2025
img
আযমী ও আরমানের জন্য জামায়াত ফাইট করেনি, কিন্তু তুলি করেছেন : জাহেদ উর রহমান Nov 15, 2025
img
নতুন পোশাকে বাংলাদেশ পুলিশ Nov 15, 2025
img
ঢাকায় রিকশা চালালেন পাক অভিনেতা আহাদ রেজা Nov 15, 2025
img
লেস্টার সিটির ২ জন হামজার জন্য ঢাকায় Nov 15, 2025
img
চীনে বৃহত্তম একক সোনার মজুতের সন্ধান Nov 15, 2025
img
উপদেষ্টার ভাই নাহিদ ইসলামকে ধমকাইয়া আমাকে বহিষ্কার করাইছে : মুনতাসির মাহমুদ Nov 15, 2025
img
এইচ-১বি ভিসা বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল, বিদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ Nov 15, 2025
img
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো গমের তৃতীয় চালান Nov 15, 2025
img
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ‘রিভিউ আবেদন’ ছাত্রদল নেতাদের Nov 15, 2025
img
১১ ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিলো চেন্নাই Nov 15, 2025
img

জামায়াতকে মির্জা ফখরুল

মানুষ সহজে আপনাদের ভোট দেবে না Nov 15, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৫ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৭৯২ Nov 15, 2025
img
ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে মনস্থির করেছেন ট্রাম্প! Nov 15, 2025