বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, ‘ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা খুব বেশি ভালো কাজ নয়। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে হলে এ বিষয়ে খুব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘কোনো একজনের সম্পদ থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা যদি স্বাধীন থাকেন, তাহলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কী কারণ আছে। কিন্তু এটা হচ্ছে এবং এটা ভালো ফল দেবে বলে মনে করি না। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারকে বলব, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি খুব সীমিত রাখতে হবে। ওই যে ১০-১৫ জন কুলাঙ্গারের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’
ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি (বিগত সরকারের সময়) দেশে খুব বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের পথ অনুসন্ধান নিজেদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক পথে রয়েছে। তাই খুব সাহসের সঙ্গে নীতি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর আদায় বাড়ানো।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একমাত্র কাজ হলো নীতিনির্ধারণ করা। কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে তারা কেবল ঋণ দিতে উৎসাহিত করে।’ এই ঋণ দেওয়া ও পরিচালকদের নীতি গ্রহণ কার্যক্রম আলাদা করার সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যক্তি এক হয়ে গেলে দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭২ সালে ৯ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আজ কতো বড় হয়েছে। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে। তবে দেশের অল্প কিছু মানুষের হাতে টাকা। যে কারণে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ৪০ লাখ মানুষ কর দেয়। প্রতিবছর করদাতা সংখ্যা ২০ লাখ করে বাড়াতে হবে। তাহলে আর একই ব্যক্তির ওপর অনেক চাপ তৈরি হবে না।’
সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হলে সিএমএসএমই খাতে জোর দিতে হবে। তাদের কম সুদের ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তখন সমাজের বৈষম্য কমবে। আবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়ে বেকারত্ব কমে আসবে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে তার পরামর্শ হলো-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে দুনীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এমআর/টিকে