মাদাগাস্কারের পর এবার উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘জেন-জি’ প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় দুই শতাধিক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশজুড়ে হাজারো বিক্ষুব্ধ মানুষ সড়কে নেমে আসে। তারা দুর্নীতি দমন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নত সেবা নিশ্চিতের দাবিতে স্লোগান দেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে গাড়ি ও ব্যাংক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মরক্কোর মানবাধিকার সংগঠন এএমডিএইচ অভিযোগ করেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার করেছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ম্যাপ জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর ওউজদায় এক বিক্ষোভকারী পুলিশ ভ্যানে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়েছেন।
‘জেন-জি ২১২’ নামে একটি সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আন্দোলনের ডাক দেয়। সংগঠনটি কিছু জায়গায় সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও অংশগ্রহণকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের ন্যায্য দাবির বৈধতাকে খাটো করবে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকুন।’
বিক্ষোভকারীদের স্লোগানে প্রধানত উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের দাবি শোনা গেছে।
অনেকে আবার ২০৩০ ফিফা বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন। এক তরুণের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ‘অন্তত ফিফা স্টেডিয়ামে ফার্স্ট এইড কিট থাকবে! আমাদের হাসপাতালে তো সেটাও নেই।’
এই আন্দোলনকে বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক এশিয়া ও আফ্রিকার যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের অংশ হিসেবে দেখছেন। চলতি গ্রীষ্মে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মাদাগাস্কারে একই ধরনের তরুণদের আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে নেপালে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, আর মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট সোমবার সরকার ভেঙে দেন।
মরক্কোয় এখন পর্যন্ত অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হলেও অধিকাংশকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এএমডিএইচ জানিয়েছে, এখনো ৩৭ জন তরুণের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে সরকারি জোট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তরুণদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে চায়। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর আইনসঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেছে সরকার।
সূত্র : বিবিসি