রাষ্ট্র কোনো ছেলে খেলা নয় : সালাহউদ্দিন

জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের জুলাই সনদ ও নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে চলমান আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কোনো ছেলে খেলা নয়, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যায় না।’

আজ (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনডিপি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যেকোন একটা আইনানুগ বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের কারো নেই। তাহলে পরে এমন একটি পরিস্থিতির নজির সৃষ্টি হবে যে নজিরটা আগামী দুই বছর পরে, পাঁচ বছর পরে… বারবার কোনো না কোনো দাবির মুখে পড়বে যে এইভাবে এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান পরিবর্তন করেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্যকে নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে আমরা কোনদিন মাথা নত করতে পারি না। এই জনগণের স্বার্থ এই চূড়ান্ত, এই জনগণের অভিপ্রায় চূড়ান্ত। জনগণই হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক। আসুন আমরা তাদের কাছে যাই। ‘সংবিধান কচু পাতার পানি নয়’

জুলাই সনদ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচনের দিনে, একই দিনে আরেকটা ব্যালেটের মাধ্যমে গণভোটের রায়টা নেওয়া যাবে।

যদি জনগণ হ্যাঁ বলে তাহলে সেই পার্লামেন্ট সেই নির্বাচিত সংসদের প্রত্যেকটা সংসদ সদস্য আইনানুগভাবে ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হবেন এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য… তারা বাধ্য থাকবেন সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য… আমরা সেই প্রক্রিয়ার কথা বলেছি। কিন্তু না, তাদের কথাই মানতে হবে যে, সাংবিধানিক আদেশের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে এই ঘোষণা নাকি এখনই জারি করতে হবে, ‘উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট’ যে, আজকে থেকে কার্যকর হলো ধরে নিয়ে। সংবিধান তো কোনো কচু পাতার পানি নয় যে, যা খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবে আমরা বলে দিলেই পরিবর্তন হবে।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, যখন সংবিধান ছিল না… দেশে যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়েছিল, বাংলাদেশের ওপরে যখন যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখনকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই ভূখণ্ডের জন্য গণপরিষদ গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। সেখানেই জনগণের সামনে তারা বললেন তারা গণপরিষদ গঠন করলেন। তারাও রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠনের জন্য এখতিয়ার দিলেন এবং তারা জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন। 

তারা জনগণের পক্ষে সমস্ত আইনকানুন প্রেসিডেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে জারি করলেন উল্লেখ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সেই বৈধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ চলেছে। পরে সংবিধান হয়েছে। সেই সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হয়েছে। ‘তারা কারা?’

সালাহউদ্দিন বলেন, যারা আজকে পিআর পিআর করছে তাদের উদ্দেশ্যে শুধু বলি, যে কয়টা রাজনৈতিক দল নিয়ে আপনারা মাঠে এ সমস্ত বক্তব্য দিচ্ছেন তারা কারা? তাদের সাথে আপনারা যে জোট করছেন তাদের ২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে কী ভূমিকা ছিল? আমরা জানি, আপনাদের অন্তর্ভুক্ত একটি রাজনৈতিক দল... নাম নেবো না…নাম খুঁজে বের করবেন… তারা ৭ জানুয়ারির ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তারা আপনাদের দোসর হয় কিভাবে আন্দোলনে?

তিনি আরও বলেন, যারা বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাতাস করেছে আওয়ামী লীগের সমস্ত কর্মকাণ্ডে তারা আপনাদের আন্দোলনের শরিক হয় কিভাবে? বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখোশ চিনে মুখোশ উন্মোচন করেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য আপনাদের কোনো আন্দোলন করা সঠিক হবে না। আমরা চাই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট থাকুক, জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রেখে এটাকে শক্তিতে পরিণত করে চিরতরের জন্য ফ্যাসিবাদী শক্তিকে নির্বাসনে দেই।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বলবো, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সঠিক রাস্তায় ফেরত আসুন। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুন। সঞ্চালনায় ছিলেন মহাসচিব জামিল আহমেদ। আলোচনা সভায় অংশ নেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণ দলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তরিকুল ইসলাম, ন্যাপের আবদুল বারেক, এনডিপির আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

এমআর/টিকে  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নেপালের মেরা পিক পর্বতের চূড়ায় ইমতিয়াজ-শাহনাজ Nov 20, 2025
img
আহান-অনীত বলিউডের নেক্সট কাপল : করণ জোহর Nov 20, 2025
img
জামায়াত কখনো মানুষের কাছে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার Nov 20, 2025
img
স্বামীর পরকীয়ার গুঞ্জনে এবার মুখ খুললেন গোবিন্দের স্ত্রী সুনিতা Nov 20, 2025
img
হামজাকে ধন্যবাদ দিয়ে মুশফিকের মন্তব্য Nov 20, 2025
img
নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া Nov 20, 2025
img
গণশুনানিতেই মন জয় করলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম Nov 20, 2025
img
ভারত সিরিজ স্থগিত, নারী বিসিএলে ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন Nov 20, 2025
img
দুনিয়ার কথায় নয়, নিজের শক্তিতে বিশ্বাস রাখুন: অমিতাভ বচ্চন Nov 20, 2025
img
বিচার বিভাগ স্বাধীন করার শেষ ধাপ সম্পন্ন হলো: আসিফ নজরুল Nov 20, 2025
img
বনশ্রী-রামপুরায় অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান চালাল ডিএনসিসি Nov 20, 2025
img
৯ কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন করেছে ইসি Nov 20, 2025
img
অন্যকে নয়, নিজের কাজকে গুরুত্ব দিন: বিক্রান্ত ম্যাসি Nov 20, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক: তারেক রহমান Nov 20, 2025
img
তারেক রহমানকে নিয়ে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন সুইডিশ সাংসদ লটটা জনসন Nov 20, 2025
img
বরেণ্য কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ Nov 20, 2025
img
এবার জাতীয় স্টেডিয়ামে রাগবি, ‘আপত্তি’ বাফুফের Nov 20, 2025
img
নাশকতাকারীদের ঢাকা মহানগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে : ডিএমপি কমিশনার Nov 20, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে: আখতার হোসেন Nov 20, 2025
img
বহিরাগত শক্তিকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেব না: খলিলুর রহমান Nov 20, 2025