শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। বলেছেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা হলে ইসলামাবাদ ‘আফগানিস্তানের গভীরে’ হামলা চালাবে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত নিরসনে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনদিনের শান্তি আলোচনার পর মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) পাক তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, তুরস্কে দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা, যার লক্ষ্য ছিল আফগান মাটি থেকে উদ্ভূত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করা, ‘কোনো কার্যকর সমাধান আনতে ব্যর্থ হয়েছে’।
এরপর হুঁশিয়ারি দেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত আক্রমণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের জন্য বিকল্পগুলো কী, পার্লামেন্ট ভবনে সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা হামলা চালাব, আমরা অবশ্যই হামলা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হয় এবং তারা আমাদের সীমান্ত লঙ্ঘন করে, তাহলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমাদের যদি আফগানিস্তানের গভীরেও যেতে হয়, আমরা তাই করব।’
সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান ও আফগান তালেবান। যা ২০২১ সালে তালেবানদের কাবুল দখলের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।
সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর গত ১৯ অক্টোবর কাতারে প্রথম দফায় আলোচনা হয়। এরপর শনিবার (২৫ অক্টোবর) ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় বসে পাকিস্তান-আফগানিস্তান।
ওই সমসয় পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার অর্থ হবে ‘উন্মুক্ত যুদ্ধ’। রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, ইস্তাম্বুল আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি, বরং ব্যর্থতার জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করেছে।
রয়টার্সের কাছে পাকিস্তান সূত্র জানিয়েছে, আফগান ভূখণ্ডে অবস্থান করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি), তাই আফগান সরকারকে টিটিপির নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।
তবে আফগান সূত্র দাবি করেছে, টিটিপির ওপর তাদের কোনো প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ নেই। এই মতবিরোধ ঘিরেই আলোচনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং কোনো চূড়ান্ত চুক্তি ছাড়াই আলোচনা ভেঙে যায়। রয়টার্স জানিয়েছে, প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি না থাকায় সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর আজ সেই হুঁশিয়ারিরই প্রতিধ্বনি করে খাজা আসিফ বলেন, ‘কাবুল কোনওভাবেই কোনও সুরাহার জন্য আন্তরিক ছিল না। ভারতের নির্দেশে এবং তার প্রতিনিধি হয়ে ফিতনা আল-হিন্দুস্তান আফগানিস্তানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাবুলের পুরো নেতৃত্ব ভারতের হাতে খেলছে।’
এমআর