আদেশ আজ হলে উত্তম, না হলে অবশ্যই কাল : তাহের

অনেকগুলো সেটেল ইস্যু নিয়ে নানা মহল ও কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি ও ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনীতিতে একটা উত্তাপ ছড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানাভাবে ফেসবুকে আংশিক বক্তব্য তুলে ধরে, নিজেদের মনগড়া বক্তব্য রেখে জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কি না- এমন সংশয় তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও পরিষ্কার বার্তার কথা উল্লেখ করে তাহের বলেন, আমরা জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে। কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটা আদেশ জারি চাই। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চাই। গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। আমাদের বক্তব্য ও বার্তা স্পষ্ট ও পরিষ্কার।

ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাহের বলেন, আজকের ভেতরেই আদেশ জারি হলে খুবই উত্তম। রাত ১২টা, ১টার মধ্যেও আদেশ জারির নজির আছে। যদি কোনো কারণে আজকে না হয় তাহলে অবশ্যই আগামীকাল আদেশ জারি করতে হবে। আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি দেরি হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এজন্য সরকার ও যারা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তারা অবশ্যই জাতির কাছে দায়ী থাকবেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনের চতুর্থ তলায় আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সুস্পষ্ট তিনটি অঙ্গীকার ছিল। এর একটি হচ্ছে- সংস্কার করা হবে। এটা ছিল এই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র অর্জন। বাকিগুলো তো অন্যান্য স্বাভাবিক সরকারের মতোই করছে। এটাকেই যদি প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এটা খুব কার্যকর হবে, যা পুরো জাতির প্রত্যাশিত। এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে পদার্পণ করবে। এই সংস্কারের প্রস্তাবনায় যেগুলো আছে, তার মাধ্যমে এদেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধিত হবে, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলছি।

তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা শেষের সামারাইজ শেষে সক্রিয় ৩১টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

তাহের বলেন, কোনো কোনো দলের নেতারা বলছেন, একটি দলের এজেন্ডা নাকি বাস্তবায়ন করছে ঐকমত্য কমিশন। এটার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, কমিশনের এজেন্ডায় যা ছিল, তাই নিয়েই শুধু আলোচনা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা কমিশন করেনি। আমরাও অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু ঐকমত্য কমিশন রাখেনি।

অনেকগুলো পয়েন্টে আমাদের দ্বিমত ছিল, পরে আলোচনা সাপেক্ষে একমত হয়েছি। চিন্তায় অনেকের পরিবর্তন এসেছে। অফিসিয়ালি ও আনঅফিশিয়ালি অনেক বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত এনসিপি ছাড়া সব দল স্বাক্ষর করেছে। সেখানে বিএনপি ও জামায়াত পাশাপাশি সনদ তুলে ধরে স্বাক্ষর করেছি। কমিশন তো চেষ্টা করেছে শতভাগ একমত করার জন্য। ৬০/৬৫টি সংস্কার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। আবার কিছুতে শতভাগ হয়নি, তবে ৯০, ৮০ শতাংশ একমত ছিল। যেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ৭৫ শতাংশের নিচে না। সুতরাং এখন যে দলটি বিরোধিতা করছে, তাদের দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াও তো একই। কারণ, মেজরিটি যে দিকে যাবে, সেদিকেই তো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সারা দুনিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া তো একই- মেজরিটির মতই ঐকমত্য।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, তিন-চতুর্থাংশ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেখানে কোনো কোনো দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এর মানে কী? একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আমি একমত নই। হাইকোর্টের রায়ে কিন্তু এমন হয়- তিনজন বিচারপতির মধ্যে দুজন রায়ে একমত হলেও একজন ভিন্নমত দিতে পারেন। তাতে করে রায় তো ভিন্ন হয় না। যেমন, আমাদের রেজিস্ট্রেশন ছিল না- হাইকোর্টের এমন রায়েই। এটা খুব সাধারণ বিষয়। এরপরও একটা দল বলছে, তাদের নোট অব ডিসেন্ট নাকি গণভোটে পাঠাতে হবে।

টা করতে গেলে তো প্রতিদিন একটা করে গণভোট করতে হবে। কারণ, সব দলেরই তো পয়েন্টে পয়েন্টে মতভেদ ছিল। সুতরাং প্রতিদিন গণভোট সম্ভব না। এসব বলা হচ্ছে কঠিন বক্তব্যের আড়ালে ধোঁয়াশা তৈরি করা, জনগণকে আসল কথা বুঝতে না দেওয়া।

একটা দল বলছে, এটা নাকি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। সকল দলের ঐক্যের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দিয়েছিল, তা জনগণের প্রত্যাশা ও চিন্তার প্রতিফলন। এর বিপরীতটাই হচ্ছে জনগণের চিন্তার সঙ্গে ভিন্নতা।

আমরা জামায়াতে ইসলামী সবসময় চেষ্টা করি ও সাবধান থাকি যাতে কঠিন বাক্যবাণে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি না ঘটে, রাজনীতিতে অসুন্দর, অসহিষ্ণু, অগ্রহণযোগ্য পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়।

তাহের বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং দরকার, সেটা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না।

গণভোট প্রসঙ্গে তাহের বলেন, গণভোট হচ্ছে যে সংস্কারে চার্টার তৈরি হয়েছে সেটার ওপর। আর জাতীয় নির্বাচন ভিন্ন সাবজেক্ট। জাতীয় নির্বাচনের কাজ হলো জনপ্রতিনিধি ঠিক করা, রাষ্ট্র গঠন করা, সরকার গঠন করা। গণভোট হচ্ছে রিফর্মকে বৈধতা দেওয়া। এরকম দুটো বিষয়কে একসাথে করে জগাখিচুড়ি করার তো কোনো মানে হয় না। এতে করে আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে একেবারে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে চাই- কোনো ভেজাল মিশ্রিত করতে চাই না বা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাই না। আমরা সে ধরনের পরিবেশ চাই।

যারা ভিন্ন ধরনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন, তাহের সেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- এমন কোনো ইস্যু সামনে এনে সময়ক্ষেপণ করে স্বল্প সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তাপ এবং সংশয়, আস্থাহীনতার পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়, সেই চেষ্টা করার অনুরোধ জানান তিনি।

তাহের বলেন, সামনে আমরা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছি সকলে মিলে। তাহলে সামনে দুটি নির্বাচন- একটা জাতীয় নির্বাচন, আরেকটা গণভোট। প্রত্যেকটা দিনই এখন গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ‘এটা মানি, এটা মানি না’। এর মধ্যে সরকার কিভাবে থমকে আছে, কেন যে চুপ হয়ে আছে আমরা জানি না। সময়ক্ষেপণ তো হচ্ছে। এভাবে চলতে চলতে চালাকি করে এমন এক জায়গায় গেলে তখন বলবেন, ‘আর তো সময়ই নেই’। তাহলে এটাও তো এক ধরনের প্রতারণা, সুকৌশলে একটি সমস্যা তৈরি করার ষড়যন্ত্র বা অপকৌশল হিসেবে এটা বিবেচিত হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, ড. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নতুন অধ্যাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনুমোদন Oct 31, 2025
img
দেশের বাজারে ফের কমল স্বর্ণের দাম Oct 31, 2025
img
সীমা ছাড়িয়েছে মনে হলেই জবাব দেই : সোনাক্ষী সিনহা Oct 31, 2025
img
'কাবিনে যেহেতু সই করেছেন, সংসারও করতে হবে', বিএনপিকে বললেন হাসনাত Oct 31, 2025
img
ঝড়ের কবলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান! Oct 30, 2025
img
হঠাৎ হাসপাতালে অভিনেত্রী মালাইকা অরোরা Oct 30, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত Oct 30, 2025
img
অ্যাডিশনাল এসপি মশিউর রহমান গ্রেপ্তার Oct 30, 2025
img
ইসির তালিকা থেকে বাদ পড়ল আলোচিত যেসব প্রতীক Oct 30, 2025
img
পুলিশের ঊর্ধ্বতন ২ কর্মকর্তার রদবদল Oct 30, 2025
img
আগামীর বাংলাদেশ হবে দুঃশাসনমুক্ত : ডা. জাহিদ Oct 30, 2025
img
মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালায় পরিবর্তন আনল বিএমডিসি Oct 30, 2025
img
নিকুঞ্জের জামতলা রোড দখলমুক্ত ! স্বস্তি জনমনে Oct 30, 2025
img
সরিয়ে দেওয়া হলো ঢাকা ওয়াসার এমডি ও ডিএসসিসির প্রশাসককে Oct 30, 2025
img
ডিএসইতে বড় উত্থান, লেনদেন প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা Oct 30, 2025
img
উপরের নির্দেশ এলেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ুন : দুদু Oct 30, 2025
img
চট্টগ্রামে বিপ্লবী চেতনার স্রোত বইছে : মেয়র শাহাদাত Oct 30, 2025
img
জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি বাতিল Oct 30, 2025
img
তফসিলের পর মাঠপ্রশাসনে বড় রদবদলের সিদ্ধান্ত ইসির Oct 30, 2025
img
সম্পর্কে বন্ধুত্ব আর বিশ্বাসই আসল, প্রেম নয়: রাজন্যা মিত্র Oct 30, 2025