বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ কাজে লাগাতে চায় নেপাল

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন, সেই রোডম্যাপ কাজে লাগাতে চায় নেপাল। এ উদ্দেশ্যে নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউতের নেতৃত্বাধীন জুডিসিয়াল টিম বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন।

তারা প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অভিভূত হয়েছেন। নেপালের বিচার বিভাগ সংস্কারে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আশা প্রকাশ করেছেন।

বুধবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত ও তার টিম জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষকরণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সফর করছেন। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। গত ২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় নেপালের প্রধান বিচারপতি তার সফরসঙ্গীসহ সুপ্রিম কোর্টে আগমন করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সফরকালে নেপালের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে চালু হওয়া সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১১টায় নেপালের প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের অনুষ্ঠিত বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করেন। এসময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন। নেপালের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নেপালের প্রধান বিচারপতি ও তার সঙ্গে আগত প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এ ছাড়া, নেপালের প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

একইদিন দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নেপালের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ডিসকাশন অন রোডম্যাপ, রোডশো লেজিসলেটিভ চেঞ্জেস, জুডিসিয়াল ইন্টিগ্রিটে অ্যান্ড পার্টনারশিপ বিল্ডিং’ শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেন।

এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় নেপালের প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে একই হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে আরেকটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। গত ৩ নভেম্বর সকালে নেপালের প্রধান বিচারপতির জুডিসিয়াল টিম সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম ও ল' রিপোর্টার্স ফোরামের মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কার যাত্রায় গণমাধ্যম কী ভূমিকা পালন করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যাতে নেপালের বিচার বিভাগ সংস্কার কাজে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়। সাংবাদিকদের সাথে সভা শেষে একইদিন বেলা ১১টায় একই স্থানে ‘ওয়ার্কশপ: জুরিসপ্রুডেন্স ইন ট্রানজিশনাল কনটেক্সট এক্সচেঞ্জেস’ শীর্ষক সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্য বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিনি দিনরাত অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরের “সাংবিধানিক বিচ্যুতির ফলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। সেগুলো হলো, সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সরকারের আইনগত ভিত্তিকে সহায়তা প্রদান এবং বিচার বিভাগের স্বায়ত্বশাসন পুনরুদ্ধার।

তিনি উল্লেখ করেন, ঐতিহাসিক রায়, অধ্যাদেশ ও নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানবাদকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। প্রধান বিচারপতি জোর দিয়ে বলেন, বিগত ১৬ মাসের মাননির্ধারক এই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতের যেকোনো সরকার অনুসরণ করতে পারবে।

পাশাপাশি তিনি বিচার বিভাগীয় নেতৃত্বে এবং বিভিন্ন্ দেশের সাথে “জে-টু-জে কূটনীতি” শক্তিশালী করার আহবান জানান, যাতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। সফর শেষে নেপালের প্রধান বিচারপতি ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সুদানে মার্কেটে ড্রোন হামলায় নিহত ১০ Dec 21, 2025
img
মাইলি সাইরাস পেলেন বিশেষ সম্মাননা Dec 21, 2025
img
ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচিত হয়ে গেছে : পীর চরমোনাই Dec 21, 2025
img
কারাগারে বসে মনোনয়নপত্র নিলেন সাবেক এমপি Dec 21, 2025
img
তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি Dec 21, 2025
img
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে বিএনপি : প্রিন্স Dec 21, 2025
img
প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ, তবু রাজস্বে ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি Dec 21, 2025
img
২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পোস্টাল ভোটিং অ্যাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে Dec 21, 2025
img
আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ Dec 21, 2025
img
কে করবেন রাজশাহীর উইকেটকিপিং? মুশফিক নাকি আকবর? Dec 21, 2025
img
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চুরি প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার সামগ্রী , আটক ৩ Dec 21, 2025
img
হাদি হত্যা: প্রধান আসামি ফয়সালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা Dec 21, 2025
img
নির্বাচন বানচাল করতেই ওসমান হাদিকে হত্যা: জুনায়েদ সাকি Dec 21, 2025
img
লালমনিরহাটে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যকে ফেরত দিল বিজিবি Dec 21, 2025
img
শ্রীলঙ্কায় ভূমিধস নিয়ে সতর্কবার্তা, বাংলাদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ Dec 21, 2025
img
ভক্তদের সঙ্গে নিজের জীবন দর্শন ভাগ করলেন ইশা সাহা Dec 21, 2025
img
ট্রাম্পকে ফিফার ‘পিস প্রাইজ’, আগেই ফিফার কাছে একগুচ্ছ শর্ত দেয় হোয়াইট হাউজ! Dec 21, 2025
img
হোয়াইট হাউসের ক্রিসমাস ডিনারে আমন্ত্রণ পাওয়া অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা: মল্লিকা শেরওয়াত Dec 21, 2025
img
টিএফআই সেলের মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ ২৩ ডিসেম্বর Dec 21, 2025
img

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

দিল্লির ঘটনা ‘বিভ্রান্তিকর প্রচার’ নয়, বিক্ষোভ সম্পর্কে আগে জানানো হয়নি Dec 21, 2025