আমীর খসরু

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগামী নির্বাচনগুলোকে সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য করবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, যে জীবনগুলো দিতে হয়েছে, যেসব নির্বাচন কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে- যার ফলে অপশাসন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে আমরা আশা করি আগামী নির্বাচনগুলো সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য হবে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কমল মেডিএইড কর্তৃক আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, এমন একটি সময় আমরা নির্বাচনের সম্মুখীন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আশা করছি যে আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন অন্তত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে, যদিও এই নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্পর্কিত কোনো বিষয় নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিতে দেশ কত দূর যেতে পারে তা আমরা অতীতেও দেখেছি। এখনো একটি অনির্বাচিত সরকার আছে- যদিও আমি বিগত স্বৈরাচারের সঙ্গে এর তুলনা করছি না। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে যেসব কাজ করা সম্ভব, কোনো অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় আছে। কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

তিনি বলেন, সামাজিক ও কল্যাণমূলক কাজ যেকোনো উন্নত দেশে স্বাভাবিক বিষয়। উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়–কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অংশ হিসেবেই কিছু না কিছু সামাজিক কাজে অংশ নিতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখানে এখনো তা হয়নি। যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।

খসরু বলেন, আমি অবাক হয়েছি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ফার্মেসি নেই। এখান থেকেই বোঝা যায় আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে কতটা সচেতন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা শুরু করতে হবে। প্রথম উদ্যোগ হবে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। পরের ধাপ হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। আমরা চাই প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সমস্যা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কৃতিত্ব দিতে হবে- এখানে মাদকের সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবারের স্বাস্থ্য খাতে মাসে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু যদি বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এই টাকা সাশ্রয় হবে এবং তারা অন্য খাতে তা ব্যয় করতে পারবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল- সবাই সবার পাশে দাঁড়াবে। আজকের কমল মেডিএইড তারই বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এখান থেকে যখন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, বিএনপি এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায়- যা হবে জনগণের বাংলাদেশ। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হলে থাকার সময় অসুস্থতা স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব ফেলে তা তখন বোঝা যায় না- পরে আমরা এর ফল ভোগ করি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এলাকায় কোনো ফার্মেসি নেই। এলিট শ্রেণির জন্য একটি ফার্মেসি থাকলেও সবাই সেখানে যেতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলে যে মেডিকেল সেন্টার আছে, সেখানে যেকোনো অসুখের জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে হামিম যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তার প্রতি পরামর্শ- মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের ইতিবাচক কাজে আমরা সহযোগিতা করতে চাই।

কমল মেডিএইডের প্রতিষ্ঠাতা শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর যখন আমি হলে উঠি, তখন অনুভব করলাম আশপাশে কোনো ফার্মেসি নেই। তখন ভাবলাম শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি ডেলিভারি চার্জে রুমে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না। সেই চিন্তা থেকেই কমল মেডিএইডের যাত্রা।

তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা এখনো নাজুক। আমরা শুধু প্রেস রিলিজ দেওয়ার জন্য ডাকসু চাই না। ডাকসু যেন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় পরিণত না হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করে- সেই আহ্বান জানাই।

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কক্সবাজারের সাবেক এমপি আশেকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত দুদকের Nov 20, 2025
img
বিচারকের ছেলেকে হত্যার ঘটনায় আরও ৫ দিনের রিমান্ডে লিমন Nov 20, 2025
img
চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গাড়ি ছিটকে পড়ে প্রাণ গেল ১ জনের, আহত ৫ Nov 20, 2025
img
৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি হাতে পেতে যাচ্ছে ভারত Nov 20, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের শুভেচ্ছা প্রধান উপদেষ্টার Nov 20, 2025
img
শততম টেস্টের সেঞ্চুরি দাদা-দাদি ও নানা-নানিকে উৎসর্গ করলেন মুশফিক Nov 20, 2025
img
ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ Nov 20, 2025
img
শুধু মতিঝিল নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিভাগীয় অফিসে সঞ্চয়পত্র সহ ৫ সেবা বন্ধ Nov 20, 2025
img
বাউল শিল্পী আবুল সরকার গ্রেপ্তার Nov 20, 2025
img
বার্সেলোনা আমার ঘর, আমি আবার ফিরব: মেসি Nov 20, 2025
img
ভারতীয় পতাকা উড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী Nov 20, 2025
img
ভুটানের জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার কোনো দেশের আপত্তিতে আটকে নেই: আসাদ আলম সিয়াম Nov 20, 2025
img
বাংলাদেশে স্থগিত হওয়া ভারত সিরিজ হবে ২ বছর পর Nov 20, 2025
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায়ে যা বললেন রিজভী Nov 20, 2025
তারেক রহমানের জন্মদিন উদযাপন না করা নিয়ে যা বললেন রিজভী Nov 20, 2025
জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় বড় পরিবর্তন Nov 20, 2025
আ.লীগের কোনো নেতাকে নির্বাচনের মাঠে নামতে দেব না: রাশেদ খান Nov 20, 2025
শততম টেস্টের সেঞ্চুরি নিয়ে যা বললেন মুশফিকের বাবা Nov 20, 2025
img
জবিতে ছাত্রদলকে প্রাসঙ্গিক রাখতেই রাকিবকে ভিপি পদ দিয়েছে: নাজমুল হাসান Nov 20, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় জনগণের ভবিষ্যৎ ভালো হবে : মুফতি ফয়জুল করিম Nov 20, 2025