সৌন্দর্য্য চর্চায় বেশি কিছুর দরকার নেই। হাতের কাছের সহজলভ্য বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য সুন্দর। নিজের সুন্দর, মসৃণ, মোলায়েম ও উজ্জ্বল ত্বকের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে রান্না ঘরের সাধারণ মসুর ডাল।
মসুর ডালের প্যাক লাগিয়ে আপনি হতে পারেন ফর্সা, কোমল ও সুন্দর ত্বকের অধিকারী। দীর্ঘদিন যদি নিয়ম মেনে মুখে মসুরের ডালের প্যাক লাগান, তাহলে সহজেই আপনার মুখের কালো ছাপটা দূর হয়ে যাবে।
চলুন জেনে নিই, সৌন্দর্য্য চর্চায় মসুর ডালের প্যাক কীভাবে তৈরি করবেন-
ত্বক সতেজ করতে
মসুরির ডাল পিষে তার মধ্যে মধু ও দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা মাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক সতেজ হবে।
মুখের কালচে ভাব দূর করতে
মসুর ডালকে রাতে দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলায় ডালটা পিষে মুখে লাগান। রোজ যদি মুখে এই প্যাকটা লাগান, তাহলে আপনার চেহারায় কালো ভাবটা দূর হয়ে যাবে।
মুখে ও পিঠের দাগ দূর করতে
যদি মুখে বা পিঠে দাগ হয়, তাহলে মসুরের ডালের সঙ্গে পোলাও চাল মিশিয়ে পেস্ট করুন। এর সঙ্গে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলা লেবুর শুকনো গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ৪ চামচ শসার রসও দিন। মুখ ও শরীরের নানা স্থানে পেস্ট লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার পরে ধুয়ে ফেলুন।
পায়ের পাতা পরিষ্কারে মসুর ডাল
পায়ের পাতা বা আঙুলের কালচে, হাঁটু, পায়ের গোড়ালির ময়লা ও রুক্ষভাব দূর করতে প্রাচীনকাল থেকে মসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, লেবুর রস বা লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে আসছে। মসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ের পাতায় লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
গোপন অঙ্গের দাগ দূর করতে
গোপন অঙ্গের যেমন- বোগল, রানের দুই পাশের, কোমরের কাল দাগ দূর করতে মসুরের ডালের সঙ্গে কমলা লেবুর শুকনো গুঁড়ো, ৪ চামচ শসার রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
বলিরেখা দূর করতে
বলিরেখা দূর করতে কাঁচা হলুদের সঙ্গে মসুর ডাল বাটা দুধের সর মিশিয়ে ফেস প্যাক হিসেবে মুখে মাখুন। নিয়মিত লাগালে অবশ্যই দারুণ উপকার পাবেন।
কনুইর রুক্ষভাব এবং কালো দাগ দূর করতে
দুধে মসুর ডাল ভিজিয়ে রাখুন,পরে পাটাই বেটে নিন। মসুর ডাল বাটা, হলুদ বাটা, পালংশাক বাটা, টমেটোর রস, সূর্যমুখীর তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কনুইয়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে
রোদে পোড়া দাগ কমাতে মসুর ডালবাটা, কাঁচা হলুদবাটা ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
ডার্ক সার্কেল সারাতে
ক্লান্তি, স্ট্রেস, টেনশন, অসুস্থতা সবার আগে ছাপ ফেলে চোখের চারপাশে, যা আমরা ডার্ক সার্কেল হিসেবে দেখতে পায়। এর সমাধানে একমুঠো মসুরডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে ঘণ্টাখানেক। এরপর মিহি করে বেটে নিয়ে। পাতলা সুতি কাপড়ের ভেতর মসুরডাল বাটা দিয়ে পুঁটুলির মতো তৈরি করে নিন। এই পুঁটুলি চোখের ওপর দিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। এটা ডার্ক সার্কেল দূর করতে খুবই উপকার করে।
মেছতা দূর করতে
মেছতা এক ধরনের চর্মরোগ। ত্বকের রঙের সামঞ্জস্য নষ্ট করে ফেলে এই মেছতা। মেছতার বিশ্রী দাগ একবার ত্বকে দেখা দিলে তা বাড়তেই থাকে। মসুরডাল ভিজিয়ে রেখে বেটে নিতে হবে। একসঙ্গে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মেছতার ওপর লাগিয়ে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা ধরে। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের দাগ দূর হবে।
ক্ষতের দাগ সারাতে
ব্রণ, বসন্ত, ফোঁড়া, ঘা বা যেকোনো ধরনের ক্ষতের দাগ দূর করতে সাহায্য করে মসুরডাল। আক্রান্ত স্থান ভালো করে শোকাবার আগেই তা ব্যবহার করলে ভালো ফল দেয়। মসুরডাল বাটা ও কচি ডাবের পানি একসঙ্গে মিশিয়ে দাগের ওপর পুরু প্রলেপ দিতে হবে। শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঘষে ঘষে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে যেকোনো ধরনের ক্ষতের দাগ দূর হয়ে যাবে।
মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করতে
খুশকি, ময়লা, ফাঙ্গাসের আক্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মাথার ত্বক চুলকাতে থাকে। মসুরডাল বেটে চুলের গোঁড়া ও মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে দিন। আধা ঘণ্টা রেখে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ঝলমলে করে তুলতে চাইলে মাথার ত্বকসহ পুরো চুলেই মসুরডাল বেটে লাগাতে হবে। আধা ঘণ্টা রেখে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। ফলাফল দেখে চমকে যাবেন।
ত্বক ফেটে যাওয়া রোধ করতে
আবহাওয়া বা চর্মরোগের কারণে ত্বক ফেটে গেলে তা সারাতেও মসুরডালের জুড়ি নেই। মসুরডাল মিহি করে বেটে নিয়ে ত্বকে পুরু করে প্রলেপ লাগিয়ে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। পায়ের গোড়ালি ফাটা সারাতেও একইভাবে মসুরডাল ব্যবহার করতে পারেন।
টাইমস/জিএস