নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা করবো : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা শিগগিরই একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা করবো- সেটিই আমাদের স্বপ্ন। এই নির্বাচন যেন সর্বাঙ্গসুন্দর, আনন্দমুখর ও উৎসবমুখর হয়। সেটার জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আসন্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। একটি নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশগঠন ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী সর্বদাই জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও চলমান দেশ পুনর্গঠন এবং সংস্কারের কাজেও সশস্ত্র বাহিনী বরাবরের মতোই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছে। তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে ত্যাগ ও তৎপরতার এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখবে।

সরকার প্রধান বলেন, একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমরা সকল বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তথাপি যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সদা প্রস্তুত ও সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাহিনীগুলোতে যুগোপযোগী প্রযুক্তি সংযোজনের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

ফ্যাসিস্ট আমলে আমাদের বাহিনীগুলোর দক্ষতা বজায় ও বৃদ্ধির বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে দেশরক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কাজে বিপুলসংখ্যক ছাত্র ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যে বিএনসির কার্যক্রম বহুগুণ বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালের রণক্ষেত্রে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল বলে এই দিনটিকে মুক্তিযুদ্ধের এক মাইলফলক হিসেবে গৌরবের সঙ্গে পালন করা হয়। আমরা যদি বিজয় অর্জন না করতাম তবে এই বীর সেনাদের মৃত্যুদণ্ড ছিল অনিবার্য এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যের জীবন হয়ে উঠত অসহনীয়। মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতভয় বীর সেনানীরা জীবনের পরোয়া না করে, পরিবারের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরাই আপামর জনসাধারণকে সাহস জুগিয়েছেন এবং জল, স্থল ও আকাশপথে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, যুদ্ধ বেগবান ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে তখন ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ গঠন করা হয়। যার অধীনে ১১টি সেক্টরে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরই চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখি ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই যৌথ অভিযানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি বলেন, বিগত ৩৭ বছরে জাতিসংঘে আমাদের শান্তিরক্ষীরা সফলতার সঙ্গে ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ১০টি মিশনে তারা নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ এখন অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। এজন্য তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যাতে চ্যালেঞ্জিং ও বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য তাঁদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করি। আমরা যেন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে পারি- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

টিজে/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নোবেল নিতে দেশ ছাড়লেই ‘পলাতক’ হিসেবে গণ্য হবেন মাচাদো Nov 21, 2025
img
যতদিন ইনসাফ কায়েম না হবে ততদিন সংগ্রাম চলবে : সাদিক কায়েম Nov 21, 2025
img
বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ Nov 21, 2025
অভিষেক জুটিতে অজি দলে চমক Nov 21, 2025
জনতার ঢল গাজীপুরে—হুমায়ুন কবির খানের আহ্বানে আনন্দ র‍্যালি Nov 21, 2025
img
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Nov 21, 2025
img
নিজের জন্যেও ছোট আনন্দ তৈরি করুন: রাশমিকা মান্দানা Nov 21, 2025
img
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরদের স্মরণ করলো সশস্ত্র বাহিনী Nov 21, 2025
img
'মিস ইউনিভার্স'-এর মঞ্চে ফাতিমার উত্তর মুগ্ধ করল বিশ্বকে Nov 21, 2025
img
নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা করবো : প্রধান উপদেষ্টা Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক Nov 21, 2025
img
সিরিজ বাঁচানো ম্যাচে পন্তের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন পন্টিং Nov 21, 2025
৩০০ আসনে ১৫০০ ফরম বিক্রি এনসিপির Nov 21, 2025
নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনার কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা Nov 21, 2025
img
ভয়াবহ ভূমিকম্পে পরিত্যক্ত হতে পারে পুরান ঢাকা: ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক Nov 21, 2025
img
সেনাকুঞ্জ থেকে ফিরোজায় ফিরলেন খালেদা জিয়া Nov 21, 2025
img
উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩, আহত ৭০ Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক প্রকাশ Nov 21, 2025
img
অতীত ভাবার বিষয় নয়, উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই : বাবর Nov 21, 2025
img
শেষ ১২ বলে ৫০ রান, ভারতকে বড় টার্গেট দিলো বাংলাদেশ Nov 21, 2025