মনগড়া মতবাদে গড়া সমাজ শান্তি-সম্মান দিতে পারবে না : জামায়াত আমির

মনগড়া মতবাদে গড়া সমাজ শান্তি ও সম্মান দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে মহানবী (সা.) যে সমাজ গড়ে তুলেছিলেন, সেই সমাজ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ও মর্যাদার। সেই সমাজ বাদ দিয়ে মনগড়া কোনো মতবাদে গড়া সমাজ শান্তি ও সম্মান কোনোটাই দিতে পারবে না।


রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন। স্বাধীনভাবে দ্বীনি দায়িত্ব পালন ও সামাজিক-রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সাত দফা দাবির পক্ষে সমর্থন গড়ে তুলতে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সম্মিলিত ইমাম-খতিব পরিষদ। এতে প্রায় তিন হাজার ইমাম-খতিব অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানান।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘এদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে। তারা কোরআন মানে, রাসুল (সা.)-কে শেষ নবী মানে। তাই এদেশের আইন চলবে কোরআনের মতবাদে, ইনশাআল্লাহ। এ জায়গায় যতদিন দেশ না আসবে, ততদিন মানবিক সমাজ কায়েম করতে পারবো না।’

কোরআনের আইন চালু হলে অন্য ধর্মের মানুষের কী হবে- এমন প্রশ্ন উঠতে পারে জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘কোরআন শুধু মানুষ নয়, সব সৃষ্টির অধিকার দিয়েছে। মদিনায় যেমন সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করেছে, আমাদের দেশেও আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হলে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

জামায়াত আমির বলেন, মসজিদ কমিটি হবে ইমাম-খতিবদের পরামর্শের ভিত্তিতে। কমিটির প্রাণ পুরুষ হবেন খতিব-ইমামরা। তাদের বাদ নিয়ে নয়, সহযোগিতার ভিত্তিতে কমিটি হতে হবে।

তিনি ইমাম-খতিবদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা আমাদের ইমাম। আমরা আপনাদের সম্মান দেখাতে চাই। আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি তখন আপনারা আমাদের ইমাম, আমরা যখন মৃত্যুবরণ করি তখনও আপনারা আমাদের ইমাম। সমাজের ফয়সালা মিম্বার থেকে আসবে, ইনশাআল্লাহ। খতিব এবং ইমামরা মানুষ, তারাও ভুলের ঊর্ধ্বে নন। ভুল হলে তার সমাধান করতে হবে সম্মানজনকভাবে। তাদের পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকৃত আলেমদের পরামর্শে পরিচালিত হতে হবে এবং সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে ইমাম-খতিবদের মতামত। ইমামরা যেদিন সমাজের ইমাম হবে, সেদিন আমাদের মুক্তি হবে।’

তিনি জানান, মসজিদভিত্তিক কমিটি গঠনে ইমাম-খতিবদের বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা ইসলামের রীতি ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নবীজির সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করে একটি ঈমানদার সমাজ গড়ে তুলতে হলে আলেম-ওলামাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, এটি সমাজ পরিচালনার মৌলিক ভিত্তি।

ইমাম ও খতিবদের বিভিন্ন নৈতিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, দেশের মুসলমানদের আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা যারা দেন, তাদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব। ইমামদের মানোন্নয়ন, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ ও ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। তিনি জানান, ধর্মীয় নেতৃত্বের মর্যাদা রক্ষায় যেকোনো নৈতিক দাবির পাশে জামায়াতে ইসলামী থাকবে।

শফিকুর রহমান বলেন, এ উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন নবীজির শিক্ষায় গড়ে ওঠা আলেমরা। তাই বর্তমান সমাজে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সত্যভিত্তিক নেতৃত্ব গড়তে হলে ইমাম-খতিবদের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আজও আপনাদের সঙ্গে আছি, আগামীতেও থাকবো। আপনারাই এ সমাজকে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনাদের নেতৃত্বে সোনালি সমাজ গড়ে উঠার প্রত্যাশা আমাদের।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে জামায়াত আমির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দিকে। তিনি বলেন, মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা প্রশাসনিক চাপ কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। তিনি ইসলামবিরোধী চিন্তাধারা থেকে মসজিদকে দূরে রাখতে এবং ধর্মীয় শিক্ষায় সঠিক ব্যাখ্যা ও রীতিনীতি অনুসরণের প্রতি জোর দেন।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, সদস্যসচিব আজহারুল ইসলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ।

টিজে/টিএ  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জামায়াত প্রার্থীর অসুস্থ স্ত্রীর খোঁজ নিতে হাসপাতালে বিএনপি প্রার্থী Nov 23, 2025
img
মৌসুমের প্রথম মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথ কুমিল্লায় Nov 23, 2025
img
গাইবান্ধায় কারাগারে প্রাণ গেল আ.লীগ নেতার Nov 23, 2025
img
ফাইনালে বাংলাদেশকে ১২৬ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান শাহিনস Nov 23, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণে ১৮ হাজার নিবন্ধন Nov 23, 2025
img
মাত্র ২৬ বছর বয়সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন নিয়ে ঝরে যাওয়া তারকা নাফিসা Nov 23, 2025
img
ভূমিকম্প নিয়ে স্বস্তির বার্তা Nov 23, 2025
img
কোথায় আপনারা, পালিয়েছেন কেন? আ.লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তানিয়া রব Nov 23, 2025
img
ভারতের ওয়ানডে অধিনায়ক হলেন কেএল রাহুল Nov 23, 2025
img
আগামীতে বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে : মির্জা ফখরুল Nov 23, 2025
img
খালেদা জিয়ার জন্য ফুল পাঠালেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী Nov 23, 2025
img
নীলা ইসরাফীলের পোস্টে ওসমান হাদির প্রতিক্রিয়া Nov 23, 2025
img
মির্জা ফখরুলের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ মেয়ে শামারুহ Nov 23, 2025
img
দীপিকাকে সরিয়ে প্রভাসের নায়িকা তৃপ্তি Nov 23, 2025
img
তাইওয়ান নিয়ে জাপানের ভুল বার্তা দেয়া দু:খজনক: চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Nov 23, 2025
img
জাপান অস্পর্শযোগ্য ‘লাল দাগ’ ছুঁয়ে ফেলছে : চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী Nov 23, 2025
img
এবার একদিনে এশিয়ার ৩ দেশে বড় ভূমিকম্প Nov 23, 2025
img
জামায়াতের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করার খায়েশ মিটিয়ে দেবে জনগণ : এমরান সালেহ প্রিন্স Nov 23, 2025
img
বাংলাদেশে বাস করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা কাম্য নয় : কাদের সিদ্দিকী Nov 23, 2025
img
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ Nov 23, 2025