‘রকি অউর রানি কি কাহানি’-র শুটিংয়ে আমি মুম্বইয়ে। আমার একদম প্রথম দিনের কাজেই ধর্মেন্দ্রজির সঙ্গে দেখা হয়। সেদিনই ‘অভি না যাও ছোড়কে গানটা’ ওঁর লিপে শুট হয়েছিল।
অদ্ভুতভাবে সেই চলে যাওয়ার দিনটা এসেই গেল। মনে পড়ছে সেই চার্মিং মানুষটা আমার চোখের সামনে। কমবয়সে যে ‘অরা’ দেখেছি নায়ক ধর্মেন্দ্রর সেটাই প্রত্যক্ষ করলাম। কিন্তু একটু যেন দুর্বল, চোখটা ক্লান্ত, বয়স হয়েছে। দৃশ্যটা ছিল, উনি হুইল চেয়ারে বসে রয়েছেন। ফ্লোরে ওভাবেই এলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে ওঁকে প্রণাম করে আলাপ করলাম। আমাকে দেখেই উনি বলে উঠলেন ‘বেঙ্গলি আইজ!’ আমি তখন হেসে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি বাঙালি। কলকাতা থেকেই এসেছি।’ তখন উনি দু’হাতে আমার হাতটা চেপে ধরে কথা বলতে শুরু করলেন।
শক্তি সামন্ত, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়-সহ ওঁর আরও অনেক বাঙালি বন্ধুবান্ধবদের গল্প করতে লাগলেন। বললেন, ‘বাঙালিরা আমার ভীষণ ভালো বন্ধু বরাবর। অন্যরকমের সংযোগ বাঙালিদের সঙ্গে।’ প্রথম দিনের দেখাতেই এইরকম গল্প এবং আমার হাতটা কিন্তু ছাড়েননি।
সারাদিন আমাদের শুটিং হল, উনি কিন্তু একবারও ফ্লোর ছেড়ে যাননি। বয়স হলে তো মনে হয়, কাজটা সেরে বাড়ি যাই– তেমনটা ওঁকে দেখিনি। ওঁর কাছে মনিটর রয়েছে, উনি প্রত্যেকটা শট দেখছেন ওঁর এবং যতক্ষণ না সন্তুষ্ট হচ্ছেন উনি আবার শট দিচ্ছেন। করণও (জোহর) যতবার বলছে, এইরকমভাবে করব, সঙ্গে সঙ্গে উনি সম্মতি দিয়ে বলছেন আবার করবেন। যতক্ষণ না পরিচালক এবং নিজে সন্তুষ্ট হচ্ছেন, ততক্ষণ উনি কাজটা একইভাবে করে গেলেন। আমি ভাবছিলাম, ওই বয়সে আমরা হয়তো কাজ করতে পারব না। দ্বিতীয়ত, এতঘণ্টা ধরে কাজ হয়তো সম্ভব হবে না। কয়েক মাস পরে আলিয়া ভাটের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে, শুটিংয়ের বিরতির পর আবার আমরা ফ্লোরে ফিরি। তখন একদিন সারারাতের শুটিং ছিল।
সেদিন আবার উনি আমাকে দেখে বললেন, ‘ওয়ান্ডারফুল পার্সোনালিটি।’ ওঁর সেই এনার্জি ছিল অত রাতেও, ওঁর থেকে অনেক কম বয়সি একজনকে তখনও কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছেন। তখনও কোনওমতে কাজ সারার ভাবনা নেই। সারারাত কোনও ক্লান্তি বা বিরক্তি ছাড়া কাজটা করলেন। প্রকৃত অর্থে পেশাদার শিল্পীর মতো শুটিং করলেন ওই বয়সে।
আমার প্রথম ওঁর অভিনীত ছবি দেখা বলতে ‘শোলে’। পরবর্তীকালে ‘চুপকে চুপকে’ এবং আরও অনেক ছবি দেখেছি। প্রথম যখন ওকে পর্দায় দেখি মনে হয়েছিল, কী সুন্দর হাসি এই মানুষটার। সেই হাসি কিন্তু শেষ অবধি একইরকম ছিল। শুধু চোখ দুটো কিছুটা ক্লান্ত। খারাপ লাগছে ভাবলে, ‘রকি অউর রানি’-তে আমরা ওঁর শেষকৃত্যের দৃশ্যের শুটিং করেছিলাম।
সেদিনও ভেবেছিলাম, উনি সত্যিই তো একদিন পৃথিবীতে থাকবেন না। সেদিন উনি শুটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু গল্পে ওঁরই চলে যাওয়া দেখানো হচ্ছিল। সেই সব স্মৃতি ফিরে আসছে এখন।
এসএন