বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আর নেই। সোমবার ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় সিনেমার ‘হি-ম্যান’। ১২ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন; শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছিল পরিবার। আগামী ৮ ডিসেম্বর তার ৯০তম জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি চললেও তার আগেই নক্ষত্রের মতো নিভে গেল তার আলো।
ধর্মেন্দ্রর প্রস্থান শুধু এক পরিবারের নয়, ভারতীয় বিনোদন জগতেরও বিরাট ক্ষতি। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, রাজনীতিক, শিল্পী সবাই শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শোকবার্তা
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক্স-এ লিখেছেন, বর্ষীয়ান অভিনেতা ও সাবেক সাংসদ ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যু ভারতীয় সিনেমার জন্য এক বিশাল ক্ষতি।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই অভিনেতা তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্র উপহার দিয়েছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক মহিরুহ হিসেবে তিনি যে ধারা রেখে গেলেন, তা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও অসংখ্য ভক্তদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হৃদয়স্পর্শী শোকবার্তা
বলিউডের কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন— ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যু ভারতীয় সিনেমার এক যুগের অবসান। তিনি ছিলেন এক অনন্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ অভিনেতা, যিনি প্রতিটি চরিত্রে এনে দিতেন নিজস্ব গভীরতা ও মোহ। নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে তার অভিনয় অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে ছাপ রেখে গেছে। তার সরলতা, বিনয় ও আন্তরিকতা তাকে আরও মহিমান্বিত করেছে। এই শোকের সময়ে তার পরিবার, বন্ধু ও অসংখ্য ভক্তদের কথা ভাবছি। ওম শান্তি।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে গভীর বেদনা। তিনি লিখেছেন, ভারতীয় সিনেমার সোনালি যুগ আলোকিত করা উজ্জ্বল নক্ষত্র ধর্মেন্দ্রজি আর নেই এ খবর অত্যন্ত মর্মান্তিক। রোমান্টিক যুবকের চরিত্র থেকে শুরু করে শক্তিশালী ও তেজস্বী অভিনয় ধর্মেন্দ্রজি তার অসামান্য প্রতিভায় দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রজগতে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে এই শোক ভাগ করে নিচ্ছি।
কপিল শর্মার আবেগঘন বার্তা
কমেডিয়ান কপিল শর্মা এক্স-এ লিখেছেন, বিদায় ধর্মপাজি। মনে হচ্ছে দ্বিতীয়বার বাবাকে হারালাম। আপনার স্নেহ, ভালোবাসা, আশীর্বাদ—সব আমার হৃদয়ে চিরদিন থাকবে। মুহূর্তেই মানুষের মন জয় করার ক্ষমতা আপনার মতো আর কারও ছিল না। আপনি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।
রাহুল গান্ধীর শ্রদ্ধা
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস রাজনীতিক রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ধর্মেন্দ্রজির মৃত্যু সংবাদ অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সাত দশকের আলোছায়ায় তার অবদান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।
সিদ্ধার্থ মালহোত্রার স্মরণ
অভিনেতা সিদ্ধার্থ মালহোত্রা লিখেছেন অনেক বছরের স্মৃতি ও ম্যাজিক... অনস্ক্রিন ও অফস্ক্রিন দু’জায়গাতেই। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ, ধরম স্যার। পরিবারের প্রতি সমবেদনা। ওম শান্তি।
অক্ষয় কুমারের শ্রদ্ধা
অভিনেতা অক্ষয় কুমার ধর্মেন্দ্রকে স্মরণ করে লিখেছেন শৈশবজুড়ে ধর্মেন্দ্রজি ছিলেন সেই নায়ক, যার মতো হতে চেয়েছে প্রতিটি ছেলে… আমাদের ইন্ডাস্ট্রির আসল ‘হি-ম্যান’। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সিনেমা এবং আপনার ছড়িয়ে দেওয়া ভালোবাসার মধ্যেই আপনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন। ওম শান্তি।
অজয় দেবগানের শোকবার্তা
অভিনেতা অজয় দেবগান এক্স-এ লিখেছেন ধরমজি সম্পর্কে এমন হৃদয়বিদারক খবর শুনতে হলো। তার আন্তরিকতা, উদারতা ও ব্যক্তিত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছে। ইন্ডাস্ট্রি এক মহান কিংবদন্তিকে হারাল, আর আমরা হারালাম এমন একজন মানুষকে, যিনি আমাদের সিনেমার আত্মা গড়ে তুলেছিলেন।
শোকস্তব্ধ কিয়ারা আদভানি
অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি ধর্মেন্দ্রর একটি ছবি শেয়ার করে শান্তির প্রতীক পায়রা, সাদা হৃদয় (হার্ট) এবং প্রার্থনার ইমোজি যুক্ত করে আবেগঘন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
আলো ছড়িয়ে গেলেন ধর্মেন্দ্র
সাত দশকের ক্যারিয়ারে, ‘চুপকে চুপকে’, ‘ধর্ম বির’, ‘শোলে’সহ অসংখ্য সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন ধর্মেন্দ্র।
সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেন ২০২৪ সালের ‘তেরি বাতোঁ মেৎ আইসা উলঝা জিয়া’ ছবিতে। সৃজিত রাঘবনের যুদ্ধনির্ভর ছবি ‘ইক্কিস’-এও তাকে দেখা যাওয়ার কথা ছিল।
সময়ের স্রোত যেমনই হোক, ধর্মেন্দ্রর মতো নক্ষত্রের পতন শুধু শোকই নয়, রেখে যায় এক অবিনশ্বর ধারা—যা ভারতীয় সিনেমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, ভালোবাসতে শিখিয়েছে।
উল্লেখ্য, ধর্মেন্দ্রর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুকে ঘিরে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এমকে/এসএন