সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন দিগন্তজোড়া বালুকণার দিকে তাকাই, তখন মনে হয় এই সংখ্যা অগণিত, যা গুনে শেষ করা অসম্ভব। পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রতট এবং মরুভূমিতে ছড়িয়ে থাকা বালুকণার সংখ্যা মানুষের কল্পনারও বাইরে। কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে এক বিস্ময়কর তথ্য। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর সমস্ত বালুকণা একত্র করলে যে সংখ্যা হবে, মহাবিশ্বে নক্ষত্র বা তারার সংখ্যা তার চেয়েও বহুগুণ বেশি।
বিখ্যাত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগান এবং পরবর্তীতে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই দাবিটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রদান করেছেন। এই অবিশ্বাস্য তুলনাটি করার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে পৃথিবীর বালুকণার একটি আনুমানিক হিসাব বের করেছেন। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে বালুকণার সংখ্যা প্রায় ৭.৫ কুইন্টিলিয়ন (৭৫ এর পরে ১৭টি শূন্য)।
এটি একটি বিশাল সংখ্যা। কিন্তু যখন মহাকাশের দিকে টেলিস্কোপ তাক করা হয়, তখন এই সংখ্যাটি নগণ্য মনে হতে শুরু করে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের সংখ্যা প্রায় ২ ট্রিলিয়নেরও বেশি।
প্রতিটি গ্যালাক্সিতে গড়ে শত শত কোটি নক্ষত্র থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের নিজস্ব আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই প্রায় ১০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. সাইমন ড্রাইভারের নেতৃত্বে একটি দল এই নক্ষত্রগুলোর একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন। তাঁদের মতে, দৃশ্যমান মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ৭০ সেক্সিলিয়ন (৭০ এর পরে ২২টি শূন্য)। অর্থাৎ, বালুকণার সংখ্যার চেয়ে নক্ষত্রের সংখ্যা বহুগুণ বেশি।
সহজ কথায় বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রতিটি বালুকণার বিপরীতে মহাকাশে প্রায় ১০ হাজারটি করে নক্ষত্র রয়েছে। মহাবিশ্ব কত বিশাল এবং পৃথিবী তার তুলনায় কত ক্ষুদ্র, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আমরা খালি চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে মাত্র কয়েক হাজার তারা দেখতে পাই, কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অসীম এক জগত, যা আমাদের গ্রহের সমস্ত বালুকণার চেয়েও সংখ্যায় বিশাল।
সূত্র: এনপিআর
আইকে/টিএ