ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা কালভৈরব মন্দির এলাকায় সরকারি জায়গা দখল নিয়ে পুলিশ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
এ নিয়ে সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় স্থানীয় উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সাল থেকে শহরের মেড্ডা এলাকার দুই একরের বেশি জায়গা গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানাধীন দখল ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে জায়গাটির খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, বিএস পর্চা মূলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ জায়গাটি মালিকানা দাবি করে দখলে নিয়েছে। এরপরই গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিএস সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান আছে।
এদিকে, বিরোধপূর্ণ জায়গাটিতে আগে থেকে গণপূর্ত অধিদফতরের আল আমীন নামে একজন নৈশ প্রহরী বসবাস করছিলেন। তিনি গত ২৫ বছর ধরে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ গত কয়েকদিন ধরে তাকে তার অবস্থান করা কক্ষটি ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এরই অংশ হিসেবে তাকে আজ বের করে দেয়া হয়।
আল আমীন জানান, তাকে বের করে দেয়ার পর তিনি বিষয়টি গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অবগত করেন।
এদিকে খবর পেয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. মিজানুর রহমান মুজুমদার ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাকে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা জায়গায় ওই প্রকৌশলীকে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে ওই প্রকৌশলী উত্তেজিত হয়ে গেইটে লাথি দিয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। এ সময় পুলিশকে তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তিনি তার স্টাফ নৈশ প্রহরী আলামীনকে কেন বের করে দেয়া হল, এর কারণ জানতে চান, পুলিশের কাছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক ভিডিও চিত্র প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. মিজানুর রহমান মুজুমদার জানান, পুলিশের দখলে নেয়া জায়গাটিতে ১৯৬৫ সাল থেকে তাদের গণপূর্ত অধিদপ্তরের দখলে ছিল। সেই যায়গায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একটি কক্ষে বৃদ্ধ আল আমীন মিয়া যিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন নৈশ প্রহরী। তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। সোমবার দুপুরে তাকে পুলিশ জোরপূর্বক ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন। এই খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান।
তিনি আরও জানান, মামলা চলমান অবস্থায় পুলিশ তাদের জায়গা থেকে মূল্যবান গাছ কেটে নিয়েছে। মূল্যবান মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন। এ নিয়েই তিনি উত্তেজিত হয়ে পরেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘বিএস পর্চামূলে জায়গাটির দখল ও মালিকানা এখন পুলিশের হাতে। এমন অবস্থায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান যে আচরণটি করেছেন তা দুঃখজনক ও সরকারের চাকরিবিধির পরিপন্থি। এছাড়া মামলাটির আদালতে চলমান আছে। আদালত সিদ্ধান্ত দিলে গণপূর্ত অধিদফতর জায়গার মালিকানা পাবে। সেটি আদালতের বিবেচ্য বিষয়।
আর গাছ কাটার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে গাছ কাটা হয়েছে। সেটি পুরনো ঘটনা। আমরা আশা করবো ওই প্রকৌশলী সেখানে গিয়ে আর উত্তেজনা ছড়াবেন না।’