গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতি কার্যত কারো হাতেই নেই। দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক চর্চা, ব্যক্তি-নির্ভর নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা রাজনৈতিক কাঠামোকে অকার্যকর করে তুলেছে।
সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমের এক টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুন নূর তুষার বলেন, রাজনীতির একটি সুস্পষ্ট কাঠামো আছে। রাজনীতিবিদদের স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষভাবে চালানো, এসবই সুস্থ রাজনীতির পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশে সেই পরিবেশ কখনোই পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তারি ডাক্তারদের, প্রকৌশল প্রকৌশলীদের, সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের করা উচিত। তেমনি রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজনীতি অনেক আগেই রাজনীতিবিদদের হাত থেকে সরে গেছে।’
তুষারের মতে, দেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে ছিল অগণতান্ত্রিক শাসন। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ না থাকা, আগেই ভোট দিয়ে দেওয়া, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়, এসবের কারণে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার অনুশীলনের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে একসময় অন্তত গণতান্ত্রিক অভিনয় হলেও এখন সেটিও নেই। বর্তমান সরকার গণ-আন্দোলন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে গঠিত কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিপরীত পক্ষকেও সমানভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হয়। আন্দোলনের পরে সেই পরিবেশ থাকেনি।
আন্দোলনের সময় তরুণরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে অধিকার নিশ্চিত হবে সেই লক্ষ্য পূরণে সরকারের দায়িত্ব ছিল আরো বেশি কিন্তু পারেননি।
নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার ওপর আব্দুন নূর তুষার জোর দিয়ে বলেন, বিচার মানে শুধু কোনো ব্যক্তি বা দলের বিচার নয়; বিচার মানে সব মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এজন্য ভুয়া মামলা ও মিথ্যা অভিযোগ থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে হবে। আর সংস্কার মানে বিদ্যমান কাঠামোর দুর্বলতাগুলোকে ঠিক করা, যাতে কেউ অনধিকারচর্চা করতে না পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোর দুর্বলতাকেও বড় সংকট হিসেবে দেখেন তিনি। তার মতে, দলের নেতাদের হাতে ‘ব্ল্যাংক চেক’ তুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত হয়েছে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, দল বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে নয়।
তিনি বলেন, ‘যখন দলের সভাপতি বা নেত্রী চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ভোগ করতে থাকেন, তখন দল তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারায়। এখান থেকেই রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। আজকের পরিস্থিতিতে রাজনীতি কার্যত কারো হাতেই নেই।’
এমআর/টিএ