বোবায় ধরা আসলে কী এবং কেন হয়?

প্রচলিত একটি বিশ্বাস অনুযায়ী ‘বোবা’ নামক এক অশরীরী ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের বুকে চেপে বসে। ফলে এই জনৈক বোবার দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি নড়াচড়া করা বা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাই একে বোবায় ধরা বলা হয়। আবার অন্য ধারণা অনুযায়ী, যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িকভাবে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন বা বোবা হয়ে যান তাই এর নাম বোবায় ধরা।

বিশ্বজুড়ে এই ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম ‘মিথ’ প্রচলিত আছে এবং প্রায়শই একটি ‘অশুভ’ শক্তির উপস্থিতিকে এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকালে ইউরোপে একে বলা হতো অদেখা রাতের ভূত, শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েটে পুরাতন হাগ এবং অ্যালিয়েন অপহরণকারী হিসেবে এর উল্লেখ রয়েছে। ইতিহাস জুড়ে প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতিতে ছায়াময় দুষ্ট প্রাণীর গল্প রয়েছে, যা রাতে অসহায় মানুষকে আতঙ্কিত করে। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে রহস্যময় ঘুমের এই পক্ষাঘাত এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অনুভূতিগুলির ব্যাখ্যা খুঁজেছে।

বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস আসলে কী?
রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অনেকের হাত-পা অবশ হয়ে যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি শরীর বা কোন নির্দিষ্ট অঙ্গ নাড়াচাড়া করতে পারেন না এবং কথা বলতে পারেন না। অনেকে এসময় শ্বাসকষ্টেও ভোগেন। অর্থাৎ এসময় আপনি সজাগ এবং সচেতন থাকবেন কিন্তু নড়াচড়া করতে সাময়িকভাবে অক্ষম থাকবেন। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সমস্যাটি আমাদের সমাজে ‘বোবায় ধরা’ বলে পরিচিত। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘স্লিপিং প্যারালাইসিস’, যার বাংলা অর্থ হবে ঘুমের পক্ষাঘাত।

এটি কী গভীর কোনো মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
ঘুম বিষয়ক গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমন্ত অবস্থায় পক্ষাঘাত (বোবায় ধরা) হলো এমন একটি সাধারণ লক্ষণ, যা থেকে বোঝা যায় যে, ঘুমের সময় আপনার শরীর স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারছে না। খুব কম ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে গভীর অন্তর্নিহিত কোনো মানসিক সমস্যার যোগাযোগ থাকে।

কেন এমনটা হয়?
আমাদের ঘুমের চক্রটিতে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- আরইএম (র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট) এবং এনআরইএম (নন র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট)। আরইএম এবং এনআরইএম ঘুমের একটি চক্র প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়। প্রথম পর্যায়ের ঘুম হলো এনআরইএম পর্যায়ভুক্ত, যা আপনার সামগ্রিক ঘুমের ৭৫% সময় জুড়ে থাকে। এনআরইএম ঘুমের সময় আপনার শরীর শিথিল হয় এবং নিজেকে পুনরুদ্ধার করে। এনআরএম এর শেষে আপনার ঘুম আরএমই-তে স্থানান্তরিত হয়। আপনার চোখ তখন দ্রুত নড়াচড়া করে এবং এ সময়টায় আপনি স্বপ্ন দেখেন, তবে আপনার শরীরের বাকী অংশ খুবই শিথিল থাকে। আরএম ঘুমের সময় আপনার দেহের পেশী সমূহের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকে। তাই আপনি যদি আরইএম চক্র শেষ হওয়ার আগেই সচেতন হন বা জেরে ওঠেন তখন আপনি কিছুক্ষণের জন্য পেশি নাড়াচাড়া করতে বা কথা বলতে পারবেন না।

কারা এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন?
গড়ে প্রতি দশজনের মধ্যে চার জনেরও বেশি ঘুমের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারেন। এই সাধারণ অবস্থা প্রায়শই টিনএজে বছরগুলিতে দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সের পুরুষ ও নারী এতে আক্রান্ত হতে পারেন। পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও ঘুমের পক্ষাঘাত হতে পারে।

এছাড়াও যেসব কারণে এটি হতে পারে-

  • ঘুমের অভাব।
  • ঘুমের সময়সূচীতে পরিবর্তন হয়।
  • মানসিক অবস্থা যেমন স্ট্রেস বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার।
  • চিত হয়ে ঘুমালে।
  • অন্যান্য ঘুমের সমস্যা যেমন নারকোলিপসি বা রাতের বেলা লেগ ক্র্যাম্প।
  • নির্দিষ্ট ওষুধের ব্যবহার যেমন এডিএইচডি।
  • কোনো বিশেষ পদার্থের অপব্যবহার (আসক্তি)।

ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার সময় যদি আপনি নিজেকে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য সরাতে বা কথা বলতে অক্ষম মনে করেন, তবে সম্ভবত আপনি পুনরাবৃত্ত ঘুমের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায়শই এই অবস্থার জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। পর্যাপ্ত ঘুম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এটি রোধ করা সম্ভব। তবে অবস্থার অবনতি ঘটলে বা আপনার সাধারণ জীবনযাপনে ছেদ ঘটলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গণঅধিকার পরিষদের শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ Sep 20, 2025
img
আবারও দেশের বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 20, 2025
img
মার্কিন এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ায় বিপাকে ভারতীয় পেশাজীবীরা Sep 20, 2025
img
বৌদি শব্দটার মধ্যে পারিবারিক, মিষ্টি, আপন ব্যাপার আছে: স্বস্তিকা Sep 20, 2025
অর্ধেক বয়সের ছেলেদের প্রেম প্রস্তাবে বিস্মিত অভিনেত্রী! Sep 20, 2025
সোশ্যাল মিডিয়ায় ধনীদের বিলাসী জীবনধারা খতিয়ে দেখছে পাকিস্তানের কর কর্তৃপক্ষ Sep 20, 2025
img
পিআরের দাবি তুলে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: গয়েশ্বর Sep 20, 2025
'একটা দল উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ফ্যাসিবাদ কায়েমের চেষ্টা করছে Sep 20, 2025
img
স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা আর সমস্যা : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা Sep 20, 2025
img
নির্বাচনে জোরালোভাবে এআই ব্যবহার করবে সিন্ডিকেট : ইফতেখারুজ্জামান Sep 20, 2025
img
পাকিস্তানের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে সক্ষম! Sep 20, 2025
img

সাগরে লঘুচাপ

আগামী ৫ দিন বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস Sep 20, 2025
img
ভারতের বড় শত্রু অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা: মোদি Sep 20, 2025
চায়নার সাথে দীর্ঘমেয়াদী আলোচনা বাংলাদেশের Sep 20, 2025
রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে কথা হলো রেজিস্ট্রারের Sep 20, 2025
img
বাংলাদেশ সিরিজের দল ঘোষণা করল আফগানিস্তান Sep 20, 2025
img
'১৬ বছরের দুঃশাসনের চিত্র থাকবে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে' Sep 20, 2025
img
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের সমালোচনা মস্কোর Sep 20, 2025
img
নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম ইরান : পেজেশকিয়ান Sep 20, 2025
যে সময় শয়তান দৌড়ে পালায় | ইসলামিক জ্ঞান Sep 20, 2025