টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে দুদকের প্রতিক্রিয়া

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের মতে, মামলাগুলোর সাক্ষ্য-প্রমাণ ও পরিস্থিতিগত তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির সহায়তায় জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়, বরং আইন অনুযায়ী প্রমাণিত। তার বিরুদ্ধে করা মামলাসমূহে দাখিল করা সব কাগজপত্র পুনর্মূল্যায়ন করেছে দুদক।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসব তথ্য জানান।

দুদকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সাম্প্রতিক কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, তা তথ্যভিত্তিকভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এ কারণে মামলার কাগজপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা হয়।

দুদকের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিটি মামলাই মূলত টিউলিপ সিদ্দিকের খালা (ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা), তার মা শেখ রেহানা, এবং তার ভাই-বোন ও কাজিনদের নামে সরকারি প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গঠিত। একটি মামলায় আরও দেখা যায়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও একটি প্লট বরাদ্দ পান।

তিনটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচার ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ওই মামলায় টিউলিপ সিদ্দিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তার মা ও ভাইবোনদের জন্য প্লট বরাদ্দ পেতে খালাকে প্রভাবিত করার অভিযোগে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল–৫ এ বিশেষ মামলা নং ১৮/২০২৫–এ অভিযোগ করা হয় যে, টিউলিপ সিদ্দিক বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনাকে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে উৎসাহিত বা প্রলুব্ধ করেছিলেন, যাতে করে তার পরিবারের জন্য প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত হয়।

মামলাটিতে ৩২ জন সাক্ষীকে জেরা করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন শপথ নিয়ে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার ওপর ব্যক্তিগত প্রভাব ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্লটসমূহের বরাদ্দ আদায় করেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা ও ভাইবোনের নামে প্লট বরাদ্দের পরিস্থিতিগত তথ্য বিচারকের কাছে স্পষ্ট করে যে, তিনি শুধু ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাটি নয়, বরং অন্যান্য ঘটনাতেও একই ধরনের অবৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।

আইন অনুযায়ী, এসব কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫ (ক), ২০১, ২১৭, ২১৮, ৪০৯ ও ৪২০ ধারার অধীনে অপরাধে সহায়তা (abetment) হিসাবে গণ্য। এছাড়াও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারা প্রযোজ্য।

এ প্রমাণ আরও দৃঢ় হয় এই কারণে যে, খালার ওপর তার প্রভাব খাটিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক গুলশানে অত্যন্ত মূল্যবান একটি প্লট (প্লট নং CWN (A)-27 (পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়ে প্লট নং 05, ব্লক NE(A), গুলশান-২) ও ফ্ল্যাট নং B/201 বরাদ্দ নিয়েছিলেন।

উল্লেখযোগ্য যে, এসব জমি দূরবর্তী কৃষিজমি নয়; ঢাকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও মর্যাদাপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত বড় আকারের প্লট, যেখানে স্বাধীন বাড়ি অথবা ছোট আকারের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণ করা সম্ভব। এই সরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত ঢাকার জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলায় তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

এ ছাড়াও টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে লন্ডনের পাঁচটি সম্পত্তির যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যার পেছনে অফশোর কোম্পানিগুলোর সহায়তা ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠে—সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পক্ষে কীভাবে লন্ডন ও ঢাকার মতো উচ্চমূল্যের শহরে একাধিক সম্পত্তি কেনা সম্ভব হয়?

এই বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার করা হয়। যদিও তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি—দুদকের অবস্থান অনুযায়ী এটি সত্য নয়। তাকে হাজিরা ও আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি হাজির হননি এবং কোনো প্রতিনিধিও পাঠাননি।

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের স্বার্থে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি : রুমিন ফারহানা Dec 03, 2025
img
তারেক রহমান দেশে না আসতে পারলে লাভ হচ্ছে জামায়াতের : শরীফুজ্জামান শরীফ Dec 03, 2025
img
টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে দুদকের প্রতিক্রিয়া Dec 03, 2025
img
বন্যাকবলিত শ্রীলঙ্কায় মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রাণ পাঠিয়ে বিতর্কে পাকিস্তান Dec 03, 2025
img
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় গ্রেপ্তার Dec 03, 2025
img
৫-০ গোলে পর্তুগালকে উড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজিল Dec 03, 2025
img

নারী নেশনস লিগ

জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা স্পেনের Dec 03, 2025
img
ডিস্কোর ঝলমলে সাজে নতুন রূপে কেয়া পায়েল Dec 03, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হবে উৎসবমুখর : প্রধান উপদেষ্টা Dec 03, 2025
img
কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা, বাড়বে ঠাণ্ডা Dec 03, 2025
img
বেগম জিয়ার অসুস্থতা শেখ হাসিনার কারণে : রিজভী Dec 03, 2025
img
১৯ দেশের নাগরিকদের গ্রিনকার্ড-নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্র Dec 03, 2025
img
নির্বাচনী প্রচারণায় ১ দিনে হাসনাতের ১৮টি স্থানে পদযাত্রা Dec 03, 2025
img
মোদির চা বিক্রির এআই ভিডিও, রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় Dec 03, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা নিয়ে লিভ টু আপিলের আদেশ বৃহস্পতিবার Dec 03, 2025
img
খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনুপ্রেরণা : মির্জা মোস্তফা Dec 03, 2025
img
দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.১ ডিগ্রি Dec 03, 2025
img
স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমের বিকল্প নেই : ইসি কমিশনার সানাউল্লাহ Dec 03, 2025
img
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় চুয়াডাঙ্গায় দোয়া মাহফিল Dec 03, 2025
img
ট্রাকচাপা থেকে রক্ষা পেলেন রাশেদ খান Dec 03, 2025