ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হোন

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তালমিলিয়ে দেশে পোলট্রি ও মৎস্য উৎপাদন দ্রুত বাড়লেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে প্রাণিসম্পদ বিশেষ করে ছাগলের উৎপাদন আশানুরূপ বাড়েনি। অথচ ছাগল বাংলাদেশে অন্যতম গৃহপালিত পশু। যা অল্প পুঁজিতে বাড়ির আঙিনার পালন করা যায়। ছাগল পালনে গরু-মহিষের মতো উন্নতমানের খাদ্য আবাসন বা অন্যান্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না।

একটি ছাগী ৭-৮ মাসের মধ্যে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা অর্জন করে। এটি একসঙ্গে ২-৩টি বাচ্চা দেয়ার কারণে কৃষকের কাছে খুব জনপ্রিয়। এছাড়া একটি ছাগল (খাসি) ১২-১৫ মাসের মধ্যে ১৫-২০ কেজি হয়ে থাকে। ছাগলের মাংস খুব সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছাগল পালনের মাধ্যমে একজন ভূমিহীন বা প্রান্তিক খামারি বাড়তি আয় করতে পারেন।

প্রচলিত পদ্ধতিতে গ্রামে ছাগলকে মাঠে, বাগানে, রাস্তার পাশে বেঁধে বা ছেড়ে দিয়ে পালন করা হয়। সাধারণত ছাগলকে বাড়ি থেকে কোনো বাড়তি খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। কিন্তু বাড়তি আয়ের আশায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাগল পালনের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এতে ছাগলের বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। বৈজ্ঞানিক উপায়ে আবদ্ধ ও অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয়।

আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন
যাদের চারণ ভূমি বা বাঁধার জন্য কোনো জমি নেই তারা আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করতে পারেন। সেজন্য ছাগলের ঘরের জন্য উঁচু ও শুকনা জায়গা নির্বাচন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে কাঠ, বাঁশ, টিন, ছন, গোলপাতা ব্যবহার করে কম খরচে ঘর তৈরি করা যায়। প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য ঘরে ১ বর্গমিটার (১০ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়।

এই পদ্ধতিতে ছাগলকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। তবে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘরের বাইরে ঘুরিয়ে আনলে এদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন
এই পদ্ধতিতে ছাগল পালনের সময় আবদ্ধ ও ছাড়া পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। খামারে আবদ্ধ অবস্থায় এদের দানাদার খাদ্য সরবরাহ করা হয়। মাঠে চারণের মাধ্যমে এরা সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। বর্ষার সময় মাঠে নেয়া সম্ভব না হলে সবুজ ঘাসও আবদ্ধ অবস্থায় সরবরাহ করতে হবে।

ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগল সাধারণত সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে। তাছাড়া চিকন ধানের খড় খুব ছোট করে কেটে চিটাগুড় মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। পাশাপাশি ছাগল ছানার বয়স ১ মাস পার হলে উন্নত মানের কচি সবুজ ঘাস ও দানাদার খাদ্যের অভ্যাস করাতে হবে।

সবুজ ঘাস
ছাগলের জন্য ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাষকালাই, দূর্বা, বাকসা ইত্যাদি ঘাস বেশ পুষ্টিকর। দেশি ঘাসের প্রাপ্যতা কম হলে ছাগলের জন্য উন্নত জাতের নেপিয়ার, পারা, জার্মান ঘাস চাষ করা যায়। চাষ করা ঘাস কেটে বা চরিয়ে ছাগলকে খেতে দিতে হবে।

দানাদার খাদ্য
ছাগলের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সবুজ ঘাসের সঙ্গে দৈনিক চাহিদামতো দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, বিভিন্ন ডালের খোসা, খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দানাদার খাদ্যের সঙ্গে খাদ্য লবণ ও ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ যোগ করতে হয়। পাশাপাশি বয়স ভেদে ছাগলকে দৈনিক ১-২ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হয়।

ছাগলের রোগ দমন
ছাগল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। তাই এদের বাসস্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হয়। ছাগলের যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ঠাণ্ডায় এরা নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের সময় মেঝেতে ধানের খড় অথবা নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়। প্রয়োজনে ঘরের দেয়ালে চটের বস্তা টেনে দিতে হবে।

ছাগলের রোগ সমূহ

  • ভাইরাসজনিত রোগ : পি.পি.আর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : গলাফুলা, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
  • পরজীবীজনিত রোগ : ছাগলের দেহের ভিতরে ও বাইরে দু’ধরনের পরজীবী দেখা যায়। দেহের বাইরে চামড়ার মধ্যে উকুন, আটালি ও মাইট হয়ে থাকে। দেহের ভিতরে গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও পাতাকৃমি দ্বারা ছাগল বেশি আক্রান্ত হয়।

ছাগল মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়-

  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • চামড়ার লোম খাড়া দেখায়।
  • খাদ্য গ্রহণ ও জাবরকাটা বন্ধ হয়ে যায়।
  • ঝিমাতে থাকে ও মাটিতে শুয়ে পড়ে।
  • চোখের পানি ও মুখ দিয়ে লালা নির্গত হয়।

ছাগলের রোগ প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে-

  • ছাগলের ঘর ও এর চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • ছাগলকে সময়মতো টিকা দেয়াও কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো।
  • ছাগলের ঘরের মেঝে শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা করা।
  • ছাগলের বিষ্ঠা খামার থেকে দূরে সংরক্ষণ করা।
  • অসুস্থ ছাগলকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণ করা ও চিকিৎসা দেয়া।
  • প্রয়োজনে ছাগলের মলমূত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
  • মৃত ছাগলকে মাটির নিচে চাপা দেয়া।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

‘আমরা বিএনপি নই, জামায়াতও নই, আমরা নতুন বাংলাদেশের পথে’ Nov 02, 2025
img
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই জুলাই সনদের আদেশ জারি করতে হবে : হাসনাত Nov 02, 2025
img
চলতি সপ্তাহেই নতুন দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি: ইসি সচিব Nov 02, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে দিল ভারত Nov 02, 2025
img
তখনকার আমাকে দেখে ভীষণ আফসোস হয় : মুনমুন Nov 02, 2025
img
বাঙালি দর্শকের সিনেমা রুচির বিবর্তন: সুব্রত গুহ রায় Nov 02, 2025
img
গান বন্ধের সঠিক সময় নিয়ে পরামর্শ দিলেন কৌশিক গাঙ্গুলি Nov 02, 2025
img
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ১৮ নভেম্বর : ইসি সচিব Nov 02, 2025
img
ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানাল প্রধান উপদেষ্টা Nov 02, 2025
img

আইসিসি নারী বিশ্বকাপ

নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত Nov 02, 2025
img
উপহারের সেই নৌকা জমা দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির Nov 02, 2025
img
এমবাপের জোড়া গোল, ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয় রিয়ালের Nov 02, 2025
img
ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করেনি, করতেই পারত : ইন্দ্রানী দত্ত Nov 02, 2025
img
নিজের মূল্যবোধে অটল অভিনেত্রী ইশা সাহা Nov 02, 2025
img
জন্মদিনে কিং খানকে শুভেচ্ছা বার্তা মমতা ব্যানার্জির Nov 02, 2025
img
সমাজে অভিনেত্রীর ভুল ধারণা বদলাতে হবে : ঋতাভরী চক্রবর্তী Nov 02, 2025
img
স্বাধীনতা-গণতন্ত্র ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত ছাত্রদল : এ্যানি Nov 02, 2025
img
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে বৃষ্টির হানা, আছে রিজার্ভ ডে Nov 02, 2025
img
মায়ের শিক্ষা থেকে গড়ে উঠেছে মিমি দত্তের দৃঢ় মনোভাব Nov 02, 2025
img
প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নিতে সম্মত এনসিপি, জানালেন পাটওয়ারী Nov 02, 2025