ইঁদুর থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে রেট এইচইভি ভাইরাস

বাদুড় থেকে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাসের ফলে বিশ্বজুড়ে মহামারী দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাচ্ছেন বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ইঁদুর থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে ইঁদুরের হেপাটাইটিস-ই বা রেট এইচইভি ভাইরাস।

৩০ই এপ্রিল হংকংয়ে ৬৬ বছর বয়স্ক একজন লোক লিভারের জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষার পর রেট-এইচইভি পজিটিভ হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে মানবদেহে রেট-এইচইভি শনাক্তের সর্বশেষ ঘটনা।

২০১৮ সালে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা রেট-এইচইভি মানবদেহে প্রথমবারের মতো শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে সময় ৫৬ বছর বয়সী লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো এক ব্যক্তি লিভারের অস্বাভাবিকতা নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন। রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সাড়া দিচ্ছিল। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে তার রক্তে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের (এইচইভি) কোনো স্ট্রেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে আবারও পরীক্ষা করার পর তার দেহে প্রথমবারের মতো রেট-এইচইভি বা ইঁদুরের হেপাটাইটিস-ই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তবে আরও অনেকের মধ্যে এটি সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মানবদেহে ভাইরাসটি আবিষ্কারকদের মধ্যে একজন হলেন- মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও এইচকিউ গবেষক ডক্টর সিদ্ধার্থ শ্রীধর। তিনি এ বিষয়ে বলেন, “হঠাৎ করেই আমারা এমন একটি ভাইরাস খুঁজে পেলাম, যা রাস্তার ইঁদুর থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। হয়তো অনেকেই ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন যাদের এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”

ভাইরাসটি কিভাবে ইঁদুর থেকে মানুষে সংক্রমিত হলো তা এখনও জানা যায়নি, আবিষ্কার হয়নি ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ। ভাইরাসটি কতদিন পর্যন্ত সুপ্ত থাকে বা এ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে কতদিন লাগবে সে বিষয়েও এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের।

ডক্টর সিদ্ধার্থের মতে, আপাত দৃষ্টিতে এটি শুধু হংকংয়ের সমস্যা বলে মনে হলেও একইভাবে রেট-এইচইভি ছড়িয়ে পড়তে পারে নিউইয়র্ক প্যারিস কিংবা বিশ্বের যেকোনো স্থানে। যেহেতু ভাইরাসটিতে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তিই শুধু হালকা উপসর্গ অনুভব করতে পারেন তাই তারা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করবেন না। আবার সাধারণ এইচইভি পরীক্ষায় রেট-এইচইভি শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না, তাই এই ভাইরাসে কতজন আক্রান্ত সেটা শনাক্ত করাও জটিল।

হেপাটাইটিস-ই একটি লিভারের জটিলতা, যার ফলে জ্বর ও জন্ডিস দেখা দেয় এবং লিভার বড় হয়ে যায়। ভাইরাসটির চারটি প্রজাতি রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রাণীদেহে সংক্রমিত হয়। তবে এর সবগুলি মানুষকে সংক্রমিত করে না। ২০১৮ সালের হংকংয়ের ওই ঘটনার আগে পর্যন্ত মানবদেহে রেট-এইচইভি সংক্রমণ হতে পারে সে বিষয়ে কারও ধারণা ছিল না। তথ্যসূত্র: সিএনএন

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: