করোনাভাইরাসে পুরুষের মৃত্যুহার বেশি কেন?

চীন, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা রোগীদের মধ্যে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে ফ্রন্টিয়ার্স ইন পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা জানিয়েছে যে, পুরুষ ও নারীদের রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি সমান।

ইতালি ও চীনে পুরুষের মৃত্যুহার নারীদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। নিউইয়র্ক শহরে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা প্রায় ৬১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়াতেও প্রায় একইরকম অবস্থা, তবে এখানে মারা যাওয়া লোকের বেশির ভাগের বয়স ৭০ বছরের বেশি।

কেন এমনটি হচ্ছে? এর জন্যে কি পুরুষের জিন, হরমোন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা আচরণ দায়ী? তবে কারণ যাইহোক না কেন নারীরা পুরুষদের তুলনায় সাধারণত গড়ে ছয় বছর বেশি বাঁচেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারীতেও তাদের মৃত্যু হার কম।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি, বিশেষত হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই সব রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি, এটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বেশি সংখ্যক পুরুষ মারা যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং গ্লোবাল সংক্রামক রোগ ও এপিডেমিওলজি নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. স্টিফেন বার্জার বলেন, “বয়স্ক নারীদের তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগ বেশি দেখা যায়, এটি একটি কারণ হতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, পুরুষদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও যকৃতের রোগ বেশি রয়েছে। এছাড়াও জেনেটিক্স এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে। নারীদের দেহে অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম থাকার কারণে পুরুষদের তুলনায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বেশি শক্তিশালী।”

এছাড়াও পুরুষদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ধুমপায়ীর সংখ্যা বেশি। কোভিড-১৯ রোগটি যেহেতু ফুসফুসকে সংক্রমিত করে তাই এই দিক থেকেও পুরুষেরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তিনি আরও বলেন, “উদাহরণস্বরূপ চীনে ধূমপান করার ক্ষেত্রে পুরুষেরা এগিয়ে আছে, যার ফলে বহু পুরুষ দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন।”

এছাড়াও পুরুষদের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বেশি, ফলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া বাইরে বেরোনোর মতো ঝুঁকি গ্রহণের দিক থেকেও তারা এগিয়ে আছেন। আবার একই সঙ্গে উপসর্গ দেখা দিলে পুরুষদের মধ্যে সেটি অবহেলা করার প্রবণতাও রয়েছে।

এসব কারণে পুরুষদের কোভিড-১৯ রোগটিতে আক্রান্ত হওয়াে এবং এর ফলে মারা যাওয়ার সংখ্যা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঠিক কি কারণে রোগটিতে পুরুষের মৃত্যু হার এত বেশি সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম, সাইন্স অ্যালার্ট ও দ্যা টেলিগ্রাফ (অস্ট্রেলিয়া)

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: