ঘরে বসে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে আসা ঈদে সবাইকে ঘরে বসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের আগে রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেওয়া এ ভাষণ টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। ঘরে বসেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন। এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনের খোঁজখবর নেব।

দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাবে কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশি, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না। আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন।

দীর্ঘ সাধারণ ছুটির মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় আছে বিপদ কখনও একা আসে না। আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আমাদের আগাম প্রস্তুতির কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন দ্বীপ, চরাঞ্চল এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসকারী ২৪ লাখেরও বেশি মানুষকে এবং প্রায় ছয় লাখ গবাদিপশু আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। সর্বাত্মক প্রস্তুতি সত্বেও গাছ ও দেয়াল চাপায় বেশ কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন এবং বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবছর আমরা সকল ধরনের গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মত এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না। ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এর আগে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানান। তারা সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদকর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করছেন। তিনি তাদেরও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মী এবং সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ও সংবাদকর্মী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি। জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার ডাক্তার এবং পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মহীন মানুষের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খাদ্য সহায়তা ছাড়াও দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৯১ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১০ কেজি টাকা দরে বিক্রির জন্য ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মে মাসে দরিদ্র পরিবারের জন্য অতিরিক্ত ৫০ লাখ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে তারা এই চাল কিনতে পারবেন। কাজ হারিয়েছেন কিন্তু কোন সহায়তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নন এ ধরনের ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ১২ শো ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য দু-দফায় ১৭ কোটিরও বেশি এবং সারা দেশের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সহায়তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে আমরা ইতোমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপি'র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের এই মহামারী সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোন প্রতিষেধক টীকা আবিস্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাউন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।

তিনি বলেন, আমরা ঈদের আগে স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য নিয়মনকানুন মেনে কিছু কিছু দোকানপাট খুলে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছি। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন এবং যারা দোকানে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, আপনারা অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। ভিড় এড়িয়ে চলবেন।’

প্রধানমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। মনে রাখবেন আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে, প্রতিবেশি সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে।

শেখ হাসিনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের-ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ- গানটির কয়েক চরণ তুলে ধরে তার ভাষণ শেষ করেন।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুই সপ্তাহ পার, এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন হাসান মাসুদ Nov 13, 2025
img
সায়েদাবাদ থেকে সীমিত পরিসরে ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস Nov 13, 2025
img
জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে আজ আসতে পারে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত Nov 13, 2025
img
ঢাকায় পৌঁছেছেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী Nov 13, 2025
img
সালমানের ‘এশিয়ান ট্যুর’ থেকে বাদ পড়লেন অভিনেত্রী সোনাক্ষী Nov 13, 2025
img
ভাঙ্গায় মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে রেখেছে, বাস চলাচল বন্ধ Nov 13, 2025
img

ইসলামাবাদে বোমা হামলা

নিরাপত্তা শঙ্কা উপেক্ষা করে পাকিস্তানে খেলবে শ্রীলঙ্কা Nov 13, 2025
img
৫ আগস্ট আইন হাতে তুলে না নেয়াকে দুর্বলতা ভাবছে শেখ হাসিনা: ড. হেলাল Nov 13, 2025
img
‘থালাপতি কাচারি’ গানে গাইলেন বিজয়, ঘণ্টায় ভিউ ১ মিলিয়ন! Nov 13, 2025
img
সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন Nov 13, 2025
img
চট্টগ্রামে শিবিরের শোডাউন Nov 13, 2025
img
৯ বলের ব্যবধানে আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন জয় ও মুমিনুল Nov 13, 2025
img
নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আজ Nov 13, 2025
img
প্রতিদিন ২-৩টি লবঙ্গের অজানা স্বাস্থ্যগুণ Nov 13, 2025
img
অ্যাবটের জায়গায় প্রথম টেস্টে হ্যাজেলউডকে সুযোগ Nov 13, 2025
img
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন ঢাবির ভিসি Nov 13, 2025
img
আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য আমদানির অর্থ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা Nov 13, 2025
img
ডিএমপি কমিশনারের খণ্ডিত ভিডিওতে কৃত্রিম কণ্ঠ সংযোজন করে অপপ্রচার Nov 13, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে সাবেক আইজিপি মামুনকে Nov 13, 2025
img
আসন্ন সিনেমা 'কান্তা' নিয়ে দুলকার সালমানের খোলামেলা স্বীকারোক্তি Nov 13, 2025