কফি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিষয়ে যা জানা আবশ্যক

কফি নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ। কেউ কেউ কফিকে স্বাস্থ্যকর এবং উদ্যমী মনে করেন, আবার অনেকেই কফিকে আসক্তিজনক এবং ক্ষতিকর বলে দাবি করেন। তবে বেশ কিছু কফি এবং স্বাস্থ্যের সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা যায় যে এটি খুব উপকারী।

উদাহরণ স্বরূপ- টাইপ ২ ডায়াবেটিস, যকৃতের অসুস্থতা, আলজিমার প্রভৃতি বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। কফির ইতিবাচক স্বাস্থ্য প্রভাবের কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কফি নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম  উৎস।

তথাকথিত ফ্রী র‍্যাডিকাল সমূহের দ্বারা মানব দেহ ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হয়। যা প্রোটিন ও ডিএনএর মত গুরুত্বপূর্ণ অণু গুলোর ক্ষতি করে থাকে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গলি কার্যকর ভাবে এ ফ্রি র‍্যাডিকালগুলো নিয়ন্ত্রণ  করে  অকাল বার্ধক্য রোধ করে। এমনকি ক্যান্সারসহ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা সৃষ্ট রোগ থেকেও আমাদের রক্ষা করে।

কফি হাইড্রসাইনামিক এসিড, পলিফেনলসহ বিভিন্ন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। হাইড্রসাইনামিক এসিড ফ্রি র‍্যাডিকালগুলোকে নিরপেক্ষ করতে এবং জারণ চাপ প্রতিরোধ করতে খুব কার্যকর। কফিতে থাকা পলিফেনল হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মত বেশ কয়েকটি জটিল রোগ প্রতিরোধ করে।

খাদ্য তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহের বৃহত্তম উৎস

বেশির ভাগ মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১/২ গ্রাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করেন, মূলত কফি এবং চা জাতীয় পানীয় থেকে।

পশ্চিমা খাদ্য তালিকায় পানীয়গুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বিশাল উৎস হয়ে থাকে। আসলে অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলোর ৭৯% আসে পানীয় থেকে, খাদ্য থেকে আসে মাত্র ২১%। কারণ খাবারের তুলনায় তারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পানীয় বেশি গ্রহণ করে থাকেন।

এক সমীক্ষায় খাদ্য গবেষকরা বিভিন্ন খাবারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের  তালিকা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন বেরির তালিকার মাঝে কফি ছিল ১১ নাম্বারে ।

যারা কম ফলমূল গ্রহণ করেন তারা প্রতিদিন কয়েক কাপ কফি পান করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ পুষিয়ে নিতে পারেন। কারণ ২/৪ কাপ কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ ফলের থেকে বেশি।

নরওয়েজিয়ান এবং ফিনিশিয়ান গবেষণায়, কফিকে একক বৃহত্তম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছিল। কারণ তারা মোট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ৬৪% কফি থেকে সেবন করে থাকে। এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কফি গ্রহণের গড় পরিমাণ ছিল ৪৫০-৬০০মিলি বা প্রতিদিন ২/৪ কাপ ।

তাছাড়া, স্পেন, জাপান, পোল্যান্ড এবং ফান্স গবেষণায় সিদ্ধান্ত নেয়, কফিই এখন পর্যন্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধত্তম উৎস।

বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে কফি

যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৩-৫০% কমে যায়। এমনকি এক কাপ কফি ৭% করে ঝুঁকি হ্রাস করে।

কফি লিভারের জন্যও অনেক উপকারী। কারণ কফি পানকারীদের লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি অনেক কম। এটি লিভার, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত কফি পান আপনার অ্যালঝেইমার এবং পারকিন্সন রোগের ঝুঁকি ৩২-৬৫% কমিয়ে দেয়।

কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, কফি মানসিক স্বাস্থ্যের অন্যান্য দিকও উন্নত করে। যে সব মহিলা কফি পান করেন তাদের হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় ।

সর্বোপরি, অকাল মৃত্যুর ২০-৩০% ঝুঁকি কমিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ জীবনকাল দান করে কফি।

তারপরও মনে রাখতে হবে কফি নিয়ে এ গবেষণাগুলোর বেশির ভাগই পর্যবেক্ষনমূলক। তাঁরা এখনও প্রমাণ করতে পারেনি যে কফি রোগের ঝুঁকি হ্রাসের কারণ। কেবল মাত্র, কফি পানকারীদের এ রোগ গুলো হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল।

সবশেষে বলা যায়, অনেক ধরনের খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে কফি তাদের মাঝে উৎকৃষ্ট উৎস। এটি উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন ফলমূল, শাঁক সবজির মত একই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে না। তাই কফি বৃহত্তম উৎস হতে পারে কিন্তু একমাত্র উৎস হতে পারে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উদ্ভিদ যৌগ গ্রহণ করা ভাল।   

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

 

টাইমস/তরী/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ