মায়ের মন নিয়ে দেশের মানুষের সেবা করি: প্রধানমন্ত্রী

মায়ের মন নিয়ে দেশের মানুষের সেবা করেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘একটা মা যেমন সংসারটাকে আগলে রাখে, সংসারের ভালো-মন্দ বিচার করে, সংসারের প্রত্যেকটা মানুষকে সুখী দেখতে চায়, সেই মায়ের মন নিয়েই আমি দেশের জনগণের সেবা করি।’

জনগণের সেবা করা আর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রেরণা বলে জানান কন্যা শেখ হাসিনা। বলেন, ‘দেশের মানুষের মাঝেই মা-বাবার স্নেহ, ভাইয়ের ভালোবাসা খুঁজে পাই।’

শনিবার গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সরকারপ্রধান। এসময় দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ও প্রবাসে থাকা সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর সমৃদ্ধি কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মী এবং কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সকাল ১০টা থেকে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু হয়। এসময় তিনি নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে নানান উপদেশ দেন। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো। এ দেশের মানুষের কল্যাণ করা। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সে কাজই।’

‘আপনারা জানেন আমার তো কেউ নেই। বাবা মা ভাই আমি সব হারিয়েছি। সব হারিয়ে আমার ছোট বোন আর আমি বেঁচে ছিলাম। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার দায়িত্ব কর্তব্যবোধ যেটা আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, মানুষের কল্যাণ করা, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার আমি করে যাচ্ছি, আমার বাবার স্বপ্ন। প্রত্যেকটা মানুষ অন্ন ভাবে বস্ত্র পাবে শিক্ষা পাবে চিকিৎসা পাবে ঘর পাবে বাংলার মানুষের সেই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, এটাই আমার কাজ।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। এই বাংলাদেশের মানুষের মাঝে আমি খুঁজে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।’

‘বাংলাদেশের মানুষের যেন সুন্দর জীবন পায় এটাই আমি চাই। আমার ব্যক্তিগত জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, এদেশের মানুষ যদি ভালো থাকে যদি সুন্দর জীবন পায় আমি জানি আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’
দেশের মানুষের জন্য কষ্ট করতে সবসময় আছি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবসময় কষ্ট স্বীকার করেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও দেশের মানুষের জন্য সবসময় কষ্ট করতে প্রস্তুত ছিলাম এবং এখনো প্রস্তুত আছি।’

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেলেও সে তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো আছে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি।’

‘যে দারিদ্র ৪১ ভাগ ছিল, আমরা কিন্তু এই দুর্যোগের সময়ও প্রতিবছর এক শতাংশ করে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এখন আমাদের অতি দরিদ্রের হার মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে এটুকুও থাকবে না। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা সেটা পূরণ করে যাব। আমাদের দরিদ্রের হার ১৮ দশমিক ৭ ভাগ। সেটাও আমরা আরো কমিয়ে আনবো। যাতে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করা যায়।’

মানুষের জীবন যাতে স্থির ভাবে চলে সেই ব্যবস্থা করেছি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিয়ে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে কোনো মানুষ ভূমিহীন না থাকে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যেমন করেছি, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, চাকরিজীবী বা আমাদের সরকারি অফিসার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা বাহিনীর থেকে শুরু করে এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই কিন্তু নিজে নিজে কিছু সহযোগিতা মানুষকে করেছেন বা ত্রান তহবিলে দিয়েছেন।’

‘যেখানে জমি পাওয়া যায়নি সেখানে জমি কিনেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। সামান্য কিছু বাকি আছে তাদেরও ঘর নির্মাণ হচ্ছে। এটা শুধু ঘর না, বাড়ি না তাদের জমি, খাবার, পানি ও তাদের জীবন জীবিকার জন্য নগদ অর্থসহ সাহায্য করে এক একটা মানুষের জীবন যাতে স্থির ভাবে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের সামর্থবান-বিত্তবানরা অভাবী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ালে দেশের মানুষের কিন্তু কোনো কষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিশ্বব্যাপী।’

‘আজকে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ঝুলিয়ে রেখে আমাদের এগোতে হবে। এখান থেকে কেউ যেন বাংলাদেশকে আর সরিয়ে নিতে না পারে। তার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’
বারবার আগুন লাগার ঘটনা চক্রান্ত কি না দেখতে হবে

রোজার মাসে রাজধানী ঢাকায় বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটসহ একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ‘আগুনসন্ত্রাসীদের’ চক্রান্ত আছে কি না দেখতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। অগ্নিকাণ্ডে যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম বঙ্গবাজারে যখন আগুন লাগল মনে হয়েছিল যেন এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। এরপর কয়েকটি আগুন লাগার পর মনে হচ্ছে...আমি জানি না ঠিক, তারপরও আমার সন্দেহ যে যারা একসময় ২০১৩-১৪, ১৫ সালের আগুনসন্ত্রাস করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মেরেছিল। যারা প্রায় ৩৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, ৩২টা ট্রেন পুড়িয়েছে, লঞ্চ পুড়িয়েছে ৫০০ স্কুল ঘর পুড়িয়েছে। এই ধরনের জঘন্য অমানবিক কাজ যারা করেছে, এখানে তাদের কোনো চক্রান্ত আছে কি না এটাও আমাদের ভাবতে হবে। কারণ অনেকগুলো আগুন যেভাবে লেগেছে এটা অস্বাভাবিক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষ যার যার এলাকায় প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী আপনাদের সকলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর যেন সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।’

‘যারা জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে তারা পারে না এমন কোনো দুষ্কর কাজ নেই। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। এরা কারা আপনারা তা ভালো করেই জানেন। অপরাধীরা অপরাধ করতেই থাকবে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

এদিকে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বেলা ১১টা থেকে বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনীতিক, সিনিয়র সচিব, সচিব এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও করোনাভাইরাসের কারণে তিন বছর ধরে এ আয়োজন বন্ধ রাখা হয়।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে ঈদুল আজহার দিন গণভবনে সরাসরি সর্বস্তরের জনগণ ও অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে সরাসরি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়নি সরকারপ্রধানের।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গোপালগঞ্জের ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন করেছে সরকার Jul 17, 2025
img
‘চাঁদাবাজদের সামলান, নাহলে জনগণ ফ্যাসিস্টদের মতো বিতাড়িত করবে’ Jul 17, 2025
img
জুলাই স্মরণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজনের জন্য অনুমোদন Jul 17, 2025
img
বেকারত্ব দূর করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ : আসিফ মাহমুদ Jul 17, 2025
img
পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হলেন ১১০ এসআই Jul 17, 2025
img
মুক্তির আগেই ৯৭ হাজার টিকিট বিক্রি, ঝড় তুলল ‘সাইয়ারা’ Jul 17, 2025
img
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে আ.লীগ ফ্যাসিস্ট রূপ নিয়েছে : মির্যা গালিব Jul 17, 2025
img
‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’-এর প্রথম গানেই প্রেমে পড়ছেন দর্শক Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জের ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 17, 2025
img
‘ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের নয়’ Jul 17, 2025
img
শ্রীলঙ্কা সিরিজ জয়ের মধুর স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরল টাইগাররা Jul 17, 2025
img
বন্ধ হচ্ছে ইউটিউবের ট্রেন্ডিং ফিচার! Jul 17, 2025
img
শ্রীকান্ত ওডেলার নতুন ছবিতে ডন রূপে ফিরছেন মোহন বাবু Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে: নাহিদ Jul 17, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, বাড়ছে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা Jul 17, 2025
img
ভারতের সেই বিমানে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করেছিলেন ক্যাপ্টেনই Jul 17, 2025
img
যুদ্ধের বীরগাথা নিয়ে ফিরছেন ফারহান, আসছে ‘১২০ বাহাদুর’ Jul 17, 2025
img
ইরানের বিরুদ্ধে একা লড়াই করতে অক্ষম ইসরাইল: খামেনি Jul 17, 2025
img
জনস্বার্থে সড়ক ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বেছে নিয়েছি : পরওয়ার Jul 17, 2025
img
বলিউডে প্রথম ভ্যাম্পায়ার ছবি ‘থামা’, টিজার আসছে ১৪ আগস্ট Jul 17, 2025