সেন্ট্রালের লাইসেন্স বাতিল ও ডা. সংযুক্তাকে গ্রেপ্তারের দাবি

ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন নিহতের সহপাঠীরা। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং ডা. সংযুক্তা সাহাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তারা।

রোববার (১৮ জুন) ল্যাবএইড হাসপাতালে অবস্থান করা আঁখির সহপাঠী ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেয়।

তারা জানায়, সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতারণা, ভুল চিকিৎসায় তাদের সহপাঠী আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ী কয়েকজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন মূলহোতা ডাক্তার সংযুক্তা সাহা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় মূল দায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এ সময় নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে হুমকি দেয়। আমরা কোন জায়গায় বসে আছি। তারা এসে আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে, বিভিন্ন মামলার হুমকি দিচ্ছে, বিভিন্ন ঝামেলার হুমকি দিচ্ছে। গতকাল একজন লোক এসে আমাদের বলে আপনাদের তো তেল হয়ে গেছে, আপনারা বাড়াবাড়ি করছেন। গ্রেপ্তার হয়েছে দেখে কি হয়েছে, বাংলাদেশের ঘটনা এটা দুদিন পর এমনিতেই ছেড়ে দেবে। তখন আপনাদের কে দেখবে, তখন আমরা দেখব। তারা সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ থেকে এসেছে। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত চার-পাঁচ দিন ধরে আমরা এর প্রতিবাদ করেছি আপনারা সঙ্গে ছিলেন। কখনও বিশ্বাস করি না কোনো সাংবাদিক এমন হুমকি দিতে পারে। সে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গতকাল শনিবার (১৭ জুন) হুমকি দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে লোক পাঠানো হয়েছে।

এ সময় তার সহপাঠীরা ডা. সংযুক্তা সাহার লাইসেন্স বাতিল ও গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। সেই সঙ্গে সংযুক্তা সাহা যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। এ ছাড়াও সেদিন অপারেশনের সময় যারা উপস্থিত ছিল সবার লাইসেন্স বাতিলেরও দাবি জানানো হয়।
এর আগে, আজ দুপুর সোয়া ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখির মৃত্যু হয়।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নরমাল ডেলিভারির তথ্য পেয়ে গত ৯ জুন কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসেন আঁখি। কিন্তু সেদিন ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ওই নারীর ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।

এ সময় ডা. মিলি ওই প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করা হয়। এতে বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।

পরবর্তীতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে আঁখিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। তবে তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ছিল না। চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন, আঁখির ইমপ্রুভমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এরমধ্যে ব্রেন স্ট্রোকও করেন আঁখি, সেই সঙ্গে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না তার। ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার কারণে শরীরের অন্য অংশগুলো কাজ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল। এতে হাসপাতালে ভর্তির পুরো সময় তাকে রক্ত দিতে হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিশ্বাস চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ত দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

এর আগে গত বুধবার (১৪ জুন) এজাহারনামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযানে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু ঘাটতি দেখতে পান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জরুরি চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আইসিইউসহ প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। পাশাপাশি ডা. সংযুক্তা সাহাকে ওই প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঘুষ দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় এয়ারপোর্টে দুই বাংলাদেশি আটক Jul 16, 2025
img
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Jul 16, 2025
img
অভিনেতা রবি তেজার বাবা আর নেই Jul 16, 2025
img
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে রেখে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় : বিআরটিএ চেয়ারম্যান Jul 16, 2025
img
বিসিবি এবার টাইগারদের জন্য নিয়োগ দিল ‘পাওয়ার হিটিং’-এর জনক Jul 16, 2025
img
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের সময়সূচি ঘোষণা Jul 16, 2025
img
ওমান সাগরে ২০ লাখ লিটার তেলসহ ট্যাংকার জব্দ করলো ইরান Jul 16, 2025
img
ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও দাম কমাতে কাজ করছে সরকার: ফয়েজ আহমদ Jul 16, 2025
img
বিমানবন্দরের মারাত্মক ভুলে করাচির যাত্রী পৌঁছে গেলেন সৌদি Jul 16, 2025
img
কন্যাসন্তান পেয়ে জীবন বদলে গেল: সিদ্ধার্থ Jul 16, 2025
img
র‍্যান্ডম পদ্ধতিতে ১৫ হাজার ৪৯৪টি আয়কর রিটার্ন অডিটে এনবিআরের নির্বাচন Jul 16, 2025
img
‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ তিন তারকাই এখন কন্যার বাবা-মা Jul 16, 2025
img
বিনোদিনী চরিত্রেই নিজেকে খুঁজে পেলেন শুভশ্রী Jul 16, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে ইরানকে আগস্ট পর্যন্ত আলটিমেটাম Jul 16, 2025
img
অবশেষে শুটিং ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা Jul 16, 2025
img
বৃহস্পতিবার ‘জুলাইয়ের গল্প বলা’ অনুষ্ঠান Jul 16, 2025
img
বাহরাইনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 16, 2025
img
ভারতের পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট Jul 16, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন উদযাপনে বিজয়ীদের মেডেল পকেটে ঢুকিয়ে ভাইরাল ট্রাম্প! Jul 16, 2025
img
সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা Jul 16, 2025