বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. ইউনূসের বক্তব্য অসত্য: ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, ড. ইউনুস তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছেন সেটি অসত্য ও দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক। বুধবার (১২ জুন) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইউরোপিয়ান দুই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করা হয়েছে, ড. মোহাম্মদ ইউনুস শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। দেশের নাগরিকদের যেভাবে বিচার হয়, তার বিচার প্রক্রিয়াও ঠিক সেভাবেই হচ্ছে।

তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা করেছে। সে মামলার ব্যাপারে আমি বলেছি, মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।

আদালতে যে মামলা চলমান থাকে সে মামলা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী কোনো কথা বলেন না সে ব্যাপারটাও তাদেরকে (ইউরোপিয়ান প্রতিনিধি দল) বলেছি।

আরেকটি বিষয় আমি বলেছি, তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে ট্যাক্স না দেয়ার মামলা রয়েছে। তার একটি মামলায় তিনি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়ে হারার পরে ট্যাক্স দিয়েছেন। অন্যান্য মামলা যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ট্যাক্স না দেয়ার মামলা।

এদিকে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আদালতে শুনানি চলাকালে একজন নিরপরাধ নাগরিকের একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক। আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অনেক হয়রানির মধ্যে আছি। সেটারই অংশ, এটা চলতে থাকবে। আজকে সারাক্ষণ খাঁচার মধ্যে ছিলাম আমরা সবাই মিলে। যদিও আমাকে বলা হয়েছিল যে, আপনি থাকেন। আমি বললাম, সবাই যাচ্ছে, আমিও সঙ্গে থাকি। সারাক্ষণই খাঁচার ভেতরে ছিলাম।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, শুনানি চলাকালে কাঠগড়ায় কেন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, আমি আগেও প্রশ্নটা তুলেছি, আবারও সবার জন্য তুলছি। এটা কি ন্যায্য হলো নাকি? আমার বিষয় না, যে কারও জন্য। আমি যতটুকু জানি, যতদিন আসামি অপরাধী প্রমাণিত না হচ্ছে, ততদিন তিনি নির্দোষ-নিরপরাধ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একজন নিরপরাধ নাগরিককে একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আদালতে শুনানি চলাকালে, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে হয়েছে। এটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না- সেটা বিষয় না, কারও ক্ষেত্রেই যেন প্রযোজ্য না হয়।

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং, আত্মসাৎ, প্রতারণা এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমার কিছু আছে আমি তো জানি না! এটা আমি শিখিনি কোনোদিন, কোনোদিন করিনি। হঠাৎ করে প্রকাণ্ড রকমের শব্দগুলো আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। সেটার বিচার হবে, সেটা বুঝতে পারছি না। সেটা কেন হয়, এটাই হলো হয়রানি আমার কাছে। আমার কাছে, আমার সহকর্মীদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

এর আগে ২ জুন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে শুনানি করেন। অপরদিকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফেনীতে বাস উল্টে নিহত ৩ জন Oct 02, 2025
img
বাঙালি ভালোবাসে অসহায়কে, ভালোবাসে নির্যাতিতকে : মাসুদ কামাল Oct 02, 2025
img
আমরা ইন্টারনেট বন্ধ করিনি : তালেবান Oct 02, 2025
img
পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই জন্মদিন পালন করেন জেমস! Oct 02, 2025
img
খুলনায় নদী বন্দরে ১ নম্বর সংকেত, প্রতিমা বিসর্জনে থাকছে বাড়তি সতর্কতা Oct 02, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ Oct 02, 2025
img

মৎস্য উপদেষ্টা

ইলিশের রাস্তাগুলো ভরাট হয়ে গেছে, তাই কম পেয়েছি Oct 02, 2025
img
কাঁচপুর ব্রিজে গাড়িচাপায় ২ জনের প্রাণহানি Oct 02, 2025
img
নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে ড. ইউনূসের জবাবটা আরো ভালো হতে পারত : জাহেদ উর রহমান Oct 02, 2025
img
তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি: হুমায়ুন কবীর Oct 02, 2025
img

জিল্লুর রহমান

জুলাই ২০২৪-এ রাজপথের তরঙ্গ রাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবার আমন্ত্রণ Oct 02, 2025
img
ইথিওপিয়ায় গির্জার অস্থায়ী নির্মাণকাঠামো ভেঙে ৩৬ জনের প্রাণহানি Oct 02, 2025
img
দেশকে রক্ষায় ড. ইউনূস শিরদাঁড়া শক্ত করে দাঁড়িয়েছেন : জাহেদ উর রহমান Oct 02, 2025
img

গুগলের সতর্কবার্তা

নির্বাহীদের কাছে হ্যাকারদের চাঁদাবাজির ইমেইল Oct 02, 2025
img
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র Oct 02, 2025
img
এনসিপির কুষ্টিয়া জেলা কমিটি থেকে ২ নেতার পদত্যাগ Oct 02, 2025
img
সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ, এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বয়কট Oct 02, 2025
img
সতীর্থ হিসেবে বিদেশি তারকারাও এখন সাকিব-তাসকিনদের দলে Oct 02, 2025
img
নারী সাংবাদিককে হেনস্তা, ২ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা Oct 02, 2025
img
আ.লীগ হিন্দু ধর্মালম্বীদের ভোট ব্যাংক বানিয়ে ব্যবহার করত: তথ্য উপদেষ্টা Oct 02, 2025