বাগেরহাটে সুপেয় পানির তীব্র সংকট,জনদুর্ভোগ চরমে

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের পানির লবণের তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। লবণ পানি অধ্যুষিত বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে শুষ্ক মৌসুম এলেই সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলায় সরকারিভাবে নেওয়া ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে সুপেয় পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় জেলার কয়েক লাখ মানুষকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ফকিরহাট ও মোল্লাহাট ছাড়া বাকি ৭টি উপজেলায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এসব উপজেলায় বসানো অগভীর নলকূপগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও নোনা পানি ওঠায় এই পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। আগে এসব নলকূপের পানি মানুষ ব্যবহার করতো। অগভীর নলকূপের পানি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সরকারিভাবে এটি স্থাপন বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি ব্যবহার করছে। কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক এক একটি পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের এসব পুকুরের পানি পান করে কোথাও কোথাও পানিবাহিত রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না করা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অনেক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুকনো মৌসুমের শুরুতেই এই পুকুরগুলো শুকিয়ে যায়।

পুকুরের পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে জেলা পরিষদের আওতাধীন পুকুরগুলো খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে জেলার ৯টি উপজেলার ১৫৫টি সরকারি পুকুর খনন করা হয়। এরমধ্যে কিছু পুকুর পাড়ে বসানো হয় সোলার চালিত পানির ফিল্টার।

কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। খননের পর স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব পুকুরে মাছ চাষ শুরু হবে। এতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রকারের মাছের খাবার। ফলে পুকুরের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আবার পুকুর পাড়ের সোলার চালিত পানির ফিল্টারগুলোর বেশির ভাগই অকেজো। আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিম্নমানের দায়সারা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় কোনোটি স্থাপনের পর থেকে এক ফোটা পানিও উৎপাদন করেনি। ফলে সুপেয় পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।

রামপাল উপজেলার ডাকরা গ্রামের শিপ্রা রানী বলেন, খাবার পানির ব্যাপক সংকট। এখানে একটি সাপ্লাই পানির লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেটার পানিও লবণাক্ত। তারপরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে থেকে এক কলসি পানি পেতে হয়।

বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক সুপেয় পানির সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খাবার পানির সংকট নিরসনে কিছু প্রকল্প এখনও চলমান রয়েছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ Dec 04, 2024
img
অর্থ পাচার:কীভাবে গোটা দেশের অর্থনীতি খালি করে দেয়া হলো,চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ Dec 04, 2024
img
সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঘোষণা আসবে:জামায়াত আমির Dec 04, 2024
img
ভারতের সঙ্গে রামপালসহ ক্ষতিকর চুক্তিগুলো বাতিলের দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর Dec 04, 2024
img
দেশকে অস্থির করার চেষ্টা চলছে,সবাইকে একজোট থাকতে হবে:ড. ইউনূস Dec 04, 2024
img
সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত জাতীয় জনমত জরিপ ৫-১০ ডিসেম্বর Dec 04, 2024
img
অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে নায়ক বাপ্পির 'ডেঞ্জার জোন' Dec 04, 2024
img
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল তা সঠিক নয়:পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 04, 2024
img
জুনের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য:গভর্নর Dec 04, 2024
img
বন্ধ হলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাসিন্দাদের মিলনমেলা Dec 04, 2024