কিছু ছাত্র নেতৃবৃন্দের বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের কিছু ছাত্র নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য পুরো জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে। কেউ একজন কিছু বলছেন, আরেকজন তার বিরোধিতা করছেন ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এমনকি একজন নেতা বলছেন, তাদের দুইজনের মধ্যে একজন মিথ্যা বলছেন।

নুরুল হক নুর দায়িত্বশীল ছাত্র নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা দায়িত্বশীলভাবে কথা বলুন। এমন কোনো মন্তব্য করবেন না, যা সংকটকে উসকে দিতে পারে বা ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ করে দেয়।”

রোববার (২৩ মার্চ) বিকেলে চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

নুরুল হক নুর বলেন, গণআন্দোলনে ছাত্র এবং তরুণদের ভূমিকা ছিল। তারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত, খেলাফতের লোকজনও নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে। তারপরও হাসিনার সাথে আপস করেনি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এই আপসহীন লড়াই এ প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
 
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আমরা রাজপথে নেমেছিলাম। ফলে গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। এ আন্দোলনে আলেম-ওলামা এবং প্রশাসনের একটা বড় অংশ শেষ দিকে আমাদের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনীও একপর্যায়ে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজেই সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশকে কখনোই বিতর্কিত করা যাবে না।

এগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। যারাই আমরা সরকার গঠন করি, সে সময় রাষ্ট্র চালাতে এদের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। যারা এসব প্রতিষ্ঠান কলঙ্কিত করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য যার যার জায়গা থেকে আমরা আওয়াজ তুলবো। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মান রক্ষা করাও কিন্তু আমাদের দায়িত্ব।

নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫০টা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। একটা আওয়ামী লীগ না থাকলে কিছু হবে না। আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে একটা ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল। স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দল। গত ১৬ বছরের বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। কাজেই সেই অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এই দেশে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাজনীতি করবে এটা অংশীজন হিসেবে আমরা কেউই মেনে নেব না।
 
তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তাদেরকে আমরা অনুরোধ করবো, আপনাদের জায়গা থেকে শক্তভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার আওয়াজ তুলতে হবে। দেশে গত ১৬ বছর গণতন্ত্র, ভোটাধিকার না থাকার ফলে ফ্যাসিবাদ জনগণের ওপর চেপে বসেছিল।

সেই গণতন্ত্র ভোটাধিকার না থাকলে আবারও নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর চেপে বসতে পারে। আমরা মনে করি, আমরা যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছি বাংলাদেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান কিংবা গণতন্ত্রের পথে যাত্রা, এটা রাষ্ট্র সংস্কারেরই একটা অংশ। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংকটের উত্তরণ ঘটাতে হবে।

নুরুল হক নুর বলেন, রাজনীতি একটি জনসেবা। এটা পয়সা কামানোর হাতিয়ার না, এটা কোনো ব্যবসা না। যদি ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াতে পারেন, তবেই রাজনীতি করবেন। অন্যথায় না। অন্তত আগামী ১০ বছর এই দেশকে স্থিতিশীল রাখার জন্য, দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদেরকে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

এ সময় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিম, জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কাজী রাসেল, সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল হাসান , যুগ্ম আহ্বায়ক মো.জাকির হোসেনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের জন্য মোনাজাত করা হয়।

এমআর/টিএ
 

Share this news on: