বিচারপতি আখতারুজ্জামানের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা রাষ্ট্রপতির

হাই কোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এর আগে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিভিন্ন তথ্য পাঠিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি সেসব বিষয়ে খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তার আগে ২০ মার্চ গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

আগের দিন ১৯ মার্চ সংবিধানের ৯৬(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন বিচারককে অপসারণের দাবি ওঠে।

এরপর গত ১৬ অক্টোবর ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তাদের একজন ছিলেন খিজির হায়াত।খিজির হায়াত ছাড়াও হাই কোর্টের যে বিচারকদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানও ছিলেন।আর অন্যরা বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।

গত ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের তদন্তে নামার তথ্য দিয়েছিল।

সেদিন বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশনা পাওয়ায় কাউন্সিল পরের সপ্তাহে তা তদন্ত শুরু করবে।
তার আগে গত ১৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, হাই কোর্টের ‘কয়েকজন’ বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।উভয় সময়েই তদন্তের আওতায় আসা বিচারকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ছুটিতে পাঠানো বিচারকদের মধ্যে বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান নভেম্বরে এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ৩১ জানুয়ারি অবসরে যান।স্থায়ী না হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেন বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন।আর জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন।

অসদাচরণের অভিযোগে প্রায় দুই দশক আগে ২০০৪ সালে সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমানকে অপসারণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে টানাপড়েন তৈরি হয়।এরপর এক রিট মামলার রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

২০১৭ সালের ওই রায়েই বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের ওই রায় সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনে নতুন মাত্রা দেয়।রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও পরে আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিভিউ আবেদনটির শুনানি নিয়ে গত ২০ অক্টোবর বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে গত সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সুপারিশ পাঠানোর পর রাষ্ট্রপতি তা বাস্তবায়ন করেন।এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হককে ২০১৯ সালের অগাস্টে বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর থেকে তারা বিচারিক দায়িত্বের বাইরেই ছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এ বছর ১৯ নভেম্বর তাদের পদত্যাগের খবর জানানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে।

গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় ছাত্র-জনতার দাবির মুখে ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন।

এমআর/টিএ


Share this news on: