মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের মিত্রদের আক্রমণের শিকার হলে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি লারিজানি।
সোমবার (৩১ মার্চ) ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।
তিনি আরও বলেন, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটছি না। তবে যদি যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের মিত্ররা ইরানের ওপর হামলা চালায়, তাহলে আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে যেতে হবে।
এর আগে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তেহরান যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে দেশটির ওপর বোমা হামলা চালানো হবে। একইসঙ্গে ইরানসহ যেসব দেশ তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য করবে, তাদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এই হুমকির জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়, তাহলে তারা শক্তিশালী পাল্টা আক্রমণের মুখোমুখি হবে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেলে আলি লারিজানি আরও বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে যাচ্ছি না। তবে যদি আপনারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেরা বা ইসরায়েলের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা করেন, তাহলে আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না। আমাদের আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক শক্তির পথে হাঁটতে হবে।’
ট্রাম্পের হুমকির পর ইরান তাদের প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানির মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পৌঁছে দিয়েছে। জাতিসংঘকে দেওয়া চিঠিতে ইরান জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ‘যুদ্ধবাজদের উসকানি’ দেওয়ার শামিল। এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সিনিয়র কমান্ডার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ বলেন, ‘আমাদের চারপাশে অন্তত ১০টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যেখানে ৫০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন আছে। আমরা আগেও বলেছি, যারা কাচের ঘরে বাস করে, তাদের উচিত অন্যের দিকে পাথর না ছোড়া।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি পুনর্বহাল করেছেন। তার প্রথম মেয়াদে এই নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে এবং তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে।
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান সবসময় দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় অতীতে ওমান বহুবার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। এবারও ওমান এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখছে। ইরানের কূটনীতিক আরাঘচি বলেন, ‘আমাদের ওমানি বন্ধুদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাঠানো বার্তা পেয়েছে এবং তা পড়েছে।’
পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে, তারা আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রক্সি শক্তি ব্যবহার করছে। তেহরান এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
এই প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ আরি খামেনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে প্রকৃত প্রক্সি শক্তি একটিই—তা হলো দখলদার, দুর্নীতিগ্রস্ত জায়নবাদী শাসনব্যবস্থা। আমাদের লক্ষ্য এই অবৈধ রাষ্ট্রের অবসান ঘটানো।’
এদিকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই হুঁশিয়ারি নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসএন