শেখ হাসিনাকে জমি দিতে চেয়ে এখন বলছেন ‌‌‌‘সিদ্ধান্ত ভুল ছিল’

মো. নুরুল আমিন (৭২) নিতান্ত দরিদ্র মানুষ। পেটে খাবার না থাকলেও রাজনীতির মাঠের খবর ঠিকই রাখেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন বলে দাবি তার। মুগ্ধ ছিলেন শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনে। মনকে তৃপ্ত করতে শেখ হাসিনাকে সামনাসামনি একনজর দেখতে শত চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু কখনো শেখ হাসিনার ধারেকাছেও যেতে পারেননি।

শেষ চেষ্টা হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিজের একখণ্ড জমি লিখে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল, জমি লিখে দেওয়ার পর নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা তাকে কাছে ডাকবেন। এরপর সামনাসামনি দেখা হবে, মন খুলে কিছু কথা বলবেন।
 
কিন্তু তা আর হলো না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এমন অবস্থায় নিজের আগের মত পাল্টে ফেলেছেন নুরুল আমিন। শেখ হাসিনাকে জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বলছেন, তার কোনো জমিই নেই!মো. নুরুল আমিন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বেলটিয়া বালিয়া উত্তর গ্রামের মৃত মো. ইস্রাফিল মিয়ার ছেলে।
 
গত ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মো. নুরুল আমিন। তখন তিনি জানান, একসময় নরসুন্দর (নাপিত) হিসেবে কাজ করতেন। শরীরের ভারে এ কাজ করতে ভালো লাগে না। ফলে কাজ ছেড়ে বাড়িতে বেকার বসে থাকেন। সামান্য জমি রয়েছে তার। এগুলো সন্তানদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাড়ির পাশে নিজের নামে থাকা পাঁচ শতক জমির মধ্যে তিন শতক শেখ হাসিনাকে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) রেজিস্ট্রি করে দিতে চান। এজন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। জমির দলিলসহ কাগজপত্রে কোনো সমস্যা না থাকলেও নানা অজুহাতে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে না।

নুরুল আমিনের ইচ্ছে ছিল, জমি রেজিস্ট্রির পর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে শেখ হাসিনার নজরে আসবেন। তাকে একদিন শেখ হাসিনা ডাকবেন। এসময় যত চাওয়া-পাওয়া সবই বলা হবে শেখ হাসিনাকে।

নুরুল আমিন বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতেন, জমির পরিমাণ মাত্র তিন শতক হওয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার রেজিস্ট্রি করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। দলিল লেখকদের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি। জমির দলিলে কোনো ভেজাল নেই। অথচ রেজিস্ট্রি করতে গেলে একেক সময় একেক কথা বলে ঘুরানো হচ্ছে। এই তিন শতক জমির ওপর আমার সন্তানদের দাবি নেই। এই জমি শেখ হাসিনার নামে লিখে দিয়ে একবার দেখা করার সুযোগ চাই। শেখ হাসিনাকে একনজর দেখলে মনের আশা পূর্ণ হবে। মরেও শান্তি পাবো।
 
শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হলে আপনার কিছু চাওয়া আছে কিনা, এমন প্রশ্নে সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলতেন, জীবনে শত পরিশ্রম করেও সফল হতে পারিনি। অভাব অনটনে দিন-রাত পার করছি। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। শেখ হাসিনাকে খুশি হয়েই জমি লিখে দিতে চাই। এর প্রতিদান হিসেবে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনাও আমাকে কিছু দেবেন। না দিলেও মনে কষ্ট নেই।

এদিকে শেখ হাসিনা এখন আর প্রধানমন্ত্রী নেই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় নুরুল আমিনও মত ঘুরিয়েছেন।সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে নুরুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শেখ হাসিনা এখন আর দেশে নাই। তাকে জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
 
তিনি বলেন, আগের কোনো কথা মনে রাখতে চাই না। এখনো বাড়ি আর এলাকায় অলস সময় পার করছি। জীবনের কোনো স্বপ্নই বাস্তবে রূপ নেয়নি।নুরুল আমিনের এক ছেলে নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ছয় ভাই চার বোন। আমি খুলনাতে একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে আছি। বাবা কাউকে বিনামূল্যে জমি লিখে দিতে চেয়েছিলেন কি-না আমার জানা নেই। এছাড়া আমাদের না জানিয়ে বাবা এটি করতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের জমি আছে কিংবা নেই, তা প্রকাশ করতে চাই না। তবে আমরা নিজেরাই অসচ্ছল। এরমধ্যে অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে জমি দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
  
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, নুরুল আমিনের মতো এমন বহু তেলবাজ ব্যক্তি এ দেশে রয়েছে। এসব ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য প্রকাশ্যে নানা ফন্দি আঁটেন। নেতাদের কাছ থেকে সুসময়ে সুযোগ-সুবিধা হাসিল শেষে দুঃসময়ে পল্টি মারেন। যদিও দরিদ্র নুরুল আমিনের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন চিত্র হয়েছে। কারণ, সে কোনোকিছু পাওয়ার আগেই তার পছন্দের মানুষ দেশ ছেড়েছেন।

এমআর/টিএ


Share this news on: