রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, উদ্বিগ্ন নগরবাসী

ঢাকার উত্তরা, একটি প্রাণবন্ত শহর, যেখানে শহরের আধুনিকতা ও দ্রুত বিকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠছে এক অন্ধকার অধ্যায়—কিশোর গ্যাং। যদিও সময় বদলেছে, অপরাধের এই তরুণ দল তাদের কর্মকাণ্ডে পাল্টে যাওয়ার বদলে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

৫ আগস্টের পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শুধু দল বদলায়নি, বরং তাদের শক্তি ও কর্মকাণ্ডের পরিধিও বেড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে উত্তরা ও আশপাশের নতুন সেক্টর এবং পাড়া-মহল্লায় গ্যাংয়ের উৎপাত কয়েকগুণ বেড়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি এবং মারামারি, যা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গ্যাংয়ের নতুন সদস্যরা, যারা অনেক সময় স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থী হয়, এতে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের হাতে এখন আধুনিক অস্ত্রও রয়েছে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে। রাতে, উত্তরা সেক্টরগুলো এবং আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ব্রিজের মতো জায়গায় তাদের যাত্রা শুরু হয়, যেখানে তারা পথচারীদের মারধর, মোবাইল বা মানিব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ অভিযোগ করছেন যে, এলাকার কথিত রাজনৈতিক নেতারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, যা এই গ্যাংদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাদের চাঁদাবাজির কারণে অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আরও অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মাঝে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও অনেক সময় গ্যাং সদস্যদের বয়স কম হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয় না।

একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক—সম্প্রতি আব্দুল্লাহপুরে মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় বাধা দেয়ার কারণে ছিনতাইকারীরা এক মহিলার কানের দুল ছিঁড়ে মোবাইল নিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইভাবে, উত্তরা জসিমউদ্দিন এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে পথচারীদের হামলার শিকার হওয়ার খবরও ছড়িয়ে পড়েছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। অপরাধের এই তরুণ সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকলেও বর্তমানে এর পরিধি এবং তীব্রতা বাড়ছে।

কিন্তু পুলিশ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। উত্তরা ও দক্ষিণখান থানার পুলিশ বলছে, তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অনেক কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে, এসব গ্যাংয়ের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

এসব গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাদের মাঝে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগও উঠছে। যদিও পুলিশ দৃঢ় সংকল্পে বলছে, উত্তরা ও এর আশপাশের এলাকায় গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান থাকবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করা হবে।

সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গের সহায়তা ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, জনসাধারণের সচেতনতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কঠোর নজরদারি অপরিহার্য।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও কেন ভেঙে যায় শহিদ-কারিনার প্রেম Apr 18, 2025
img
সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: রিজভী Apr 18, 2025
img
সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার Apr 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি পাওয়ার চেষ্টা চলছে: অর্থ উপদেষ্টা Apr 18, 2025
img
এবার কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করবে কারিগরি শিক্ষার্থীরা Apr 18, 2025
img
জুনিয়র সাফ মিশন শুরু যশোরে আধুনিক একাডেমিতে Apr 18, 2025
img
ইউএনইসিই’র জলপথ চুক্তিতে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ Apr 18, 2025
img
জয়ের পর শাস্তি পেলেন দিল্লির বোলিং কোচ Apr 18, 2025
img
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা : এনসিপি’র উদ্বেগ Apr 18, 2025
img
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্যাশিয়ার মোশাররফ হোসেন গ্রেফতার Apr 17, 2025